Kd's e-pathsala Educational Sociology সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ধারণা ও গুরুত্ব

সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ধারণা ও গুরুত্ব



সভ্যতার আদিপর্বে মানুষ বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায় একাকী বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করতো, কিন্তু যেদিন থেকে তারা নিরাপত্তার তাগিদ অনুভব করলো সেদিন থেকে তারা একজোট হয়ে বসবাস শুরু করলো ও ফলস্বরুপ সৃষ্টি হল গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের। সমাজস্থ প্রতিটি ব্যক্তিই এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।প্রাথমিকভাবে বলা যেতে পারে, বিভিন্ন ব্যক্তিরা তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সর্বদাই বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সমিতিগুলিতে বাস করে থাকেন। এই গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে তারা নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করে যা তাদের মধ্যে একটি অন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করে। সমাজস্থ প্রতিটি ব্যক্তি অন্যের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই যে সমাজস্থ ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সদা চলতে থাকে তাকেই সাধারণ ভাষায়, ‘সামাজিক মিথস্ক্রিয়া’ বলা হয়ে থাকে। এটি সামাজিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ পরিসরকে বোঝায়। এটিই সামাজিক সম্পর্কের সেই ভিত্তি যার ভিত্তিতে মানব সমাজ বেঁচে থাকে। সুতরাং ‘সামাজিক মিথস্ক্রিয়া’ হল একটি মৌলিক সামাজিক প্রক্রিয়া, যা গতিশীল সামাজিক সম্পর্কের বর্ণনা দেওয়ার জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল সর্বদাই পৃথক পৃথক হয়ে থাকে, যা মানব সমজের বিভিন্ন দিকের পারস্পরিক সম্পর্কগুলিকে ব্যাখ্যা করে।

সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার দুটি অপরিহার্য শর্ত বর্তমান। যথা- ক) সামাজিক সংযোগ, খ) যোগাযোগ। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া যে শুধুমাত্র মুখোমুখি সম্ভব তা নয়, বিভিন্ন গনমাধ্যম (রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, টেলিফোন) ইত্যাদির ব্যবহারের মাধ্যমেও যোগাযোগ স্থাপন করা যেতে পারে। According to Gillin and Gillin, “Social Contact is the first phase of interaction”.
  • সামাজিক সংযোগ ইতিবাচক বা নেতিবাচক দু’ই হতে পারে। লোকজনের মধ্যে সহযোগিতা, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভালো থাকলে তাকে ইতিবাচক যোগাযোগ বলা হয় আবার অন্যভাবে, সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ইর্ষা, বিদ্বেষ, হিংস্রতা, দ্বন্দ্ব থাকলে তাকে নেতিবাচক যোগাযোগ বলা হয়ে থাকে।
  • যোগাযোগ হল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যম। এই যোগাযোগের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এটি আমাদের সংবেদন, প্রত্যক্ষণ এবং ধারণার মাধ্যমে ঘটতে পারে। ইন্দ্রিয়জাত অঙ্গগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ কেবলমাত্র মানুষে-মানুষের মধ্যেই হয় না, অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও হয়ে থাকে। সংবেদনশীল স্তরে, মুখের ভাব, অঙ্গভঙ্গি, হাসি, কান্নাকাটি ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া জাগায়। বুদ্ধির উপর নির্ভর করে ব্যক্তির মধ্যে একজনের ধারণা, অনুভূতি এবং প্রক্ষোভের বিনিময় করা যায়। ভাষাই মানুষের মধ্যে জ্ঞান, অনুভূতি ও ধারণা সঞ্চারের প্রধান মাধ্যম। ভাষাই ভাব বিনিময়ের মাধ্যম, এবং যোগাযোগ সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজ অনুভূতিগুলি এক জন হতে অন্য ব্যক্তিতে প্রেরণ করে থাকে এবং ফিডব্যাক গ্রহণ করে থাকে।

 

 

Definitions of Social Interaction

Following are some of the definitions of social interaction:

  • Eldredge and Merrill, “Social interaction is the general process whereby two or more persons are in meaningful contact as result of which their behaviour is modified however slightly.”
  • Drawson and Gettys, “Social interaction is a process whereby men interpenetrate the minds of each other”.
  • According to Gish N. P., “Social interaction is the reciprocal influence human beings exert on each other through inter stimulation and response”.
  • Park and Burgess, “Social interaction is of a dual nature, of persons with persons and of groups with groups”.
  • Green defined social interaction as, “the mutual influences that individuals and groups have on one another in their attempts to solve problems and in their striving towards goals”.

 

সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সরাসরি বা প্রতীকী (Direct and Symbolic) উভয়ই হতে পারে। প্রত্যক্ষ মিথস্ক্রিয়া (Direct Interaction) হয় যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কোনও ধরণের শারীরিক সংস্পর্শে থাকে। যেমন- আলিঙ্গন করা, হাতে হাতে স্পর্শ করা, ঠেলাঠেলি করা, লড়াই করা ইত্যাদি। অন্যদিকে, প্রতীকী মিথস্ক্রিয়া (Symbolic Interaction) শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, মুখভঙ্গি এবং লিখিত ভাষা নিয়ে গঠিত। ভাষাই প্রতীক প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হিসাবে পরিচিত।

সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্ব

সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং তা সামাজিক সম্পর্কের বিকাশ ঘটায় এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তাগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল-

  1. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া একজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিচয় প্রদান করে থাকে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সমস্ত সম্পর্কের ভিত্তি এবং এর মাধ্যমেই সমাজে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। তাঁর অস্তিত্ব নির্ভর করে যেভাবে তিনি অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন তার উপর।
  2. সামজিক মিথস্ক্রিয়া সমাজস্থ ব্যক্তিদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে থাকে। একটি ব্যক্তির বিভিন্ন শারীরিক, সংবেদনশীল এবং সামাজিক প্রয়োজন পরিবার, স্কুল, গির্জা, কর্মক্ষেত্রে বন্ধুদের সাথে বা সমাজে বিভিন্ন ধরণের মিথস্ক্রিয়া দ্বারা এই চাহিদাগুলির সন্তুষ্ট।
  3. সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার দরুন সমাজস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে ওঠে, ফলস্বরুপ তা গোষ্ঠী গঠনে সহায়ক হয়। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া দলগঠনে সহায়তা করে, যখন বিপুল সংখ্যক লোক একে অপরের সাথে মতবিনিময় করে, তাদের চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি বিনিময় করে, এর দ্বারা তাদের ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে, দল বা গোষ্ঠী গঠন করে থাকে।
  4. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সামাজিক নিয়মাবলী এবং নিয়ম মেনে চলতে সহায়তা করে। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি সমাজের নির্দিষ্ট কিছু বিধি ও নিয়ম রয়েছে, এটি সামাজিক স্থিতবস্থা বজায় রাখে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া মানুষকে সামাজিক রীতিনীতিগুলি মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং সামাজিক স্থিতবস্থা বজায় রাখে।
  5. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এক গোষ্ঠী হতে অন্য গোষ্ঠীতে সংস্কৃতির সঞ্চারক হিসাবে কাজ করে থাকে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সংস্কৃতিকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম, এমনকি এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে প্রেরণে সহায়তা করে। নতুন প্রজন্ম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে শেখে প্রধানত পুরানো প্রজন্মের কাছ থেকে, এবং আধুনিক যুগে প্রযুক্তিগত কৌশলের আবিষ্কার এবং, সাংস্কৃতিক প্রসার সমাজের নানান ক্ষেত্রে বা স্তরে নানাভাবে সঞ্চালিত হয়েছে।
  6. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সামাজিক পরিবর্তন সহায়ক। মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সামাজিক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে, ধ্যান-ধারণার বিনিময়, নতুন বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও চিন্তাভাবনা ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে এবং এর ফলে সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসে।
__________________________