আধুনিককালে বিদ্যালয়কে শিক্ষার সবচেয়ে উপযুক্ত, সক্রিয় এবং আনুষ্ঠানিক সংস্থা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সময়ের পরিবর্তিত প্রয়োজন অনুসারে, বিদ্যালয় তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী বিকাশ বিকাশ লাভ করেছ। নিম্নে কিছু সংজ্ঞার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ধারণা আরও পরিস্ফুট করা হল।
A school is an educational institution designed to provide learning spaces and learning environments for the teaching of students under the direction of teachers (Wikipedia).
শিক্ষাবিদ ক্যাটারগুড (Catergood) বিদ্যালয় সম্পর্কে বলেছেন,- এক বা একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের তত্ত্বাবধানে, একটি নির্দিষ্ট আসবাবপত্র যুক্ত বাসগৃহ যেখানে একটি নির্দিষ্ট পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করানো হয়।
Dictionary of Education– এ বিদ্যালয় বলতে সংঘবদ্ধ ছাত্রদের প্রতিষ্ঠান বোঝানো হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষালাভ করে। তবে আমরা বিদ্যালয় বলতে এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে বুঝে থাকি যার উদ্দেশ্য হল সমাজের অভিজ্ঞতাকে একযুগ থেকে অন্যযুগে সঞ্চালিত করা।
- According to Merriam-Webster dictionary,- An organization that provides instruction: such as-
- a group of scholars and teachers pursuing knowledge together that with similar groups constituted a medieval university
- one of the four faculties of a medieval university
- an institution for specialized higher education often associated with a university
বিদ্যালয় উদ্ভবের ক্রমবিকাশ নিম্নে একটি চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হল-
শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক কার্যাবলী-
- বৌদ্ধিক বিকাশ : বিদ্যালয়ের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ সাধন। একজন শিক্ষার্থীকে নতুন নতুন বিষয় কিংবা জ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটানো কিংবা নতুন শিক্ষণীয় বিষয় শেখার জন্য উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া হল বিদ্যালয়ের কাজ।
- ব্যক্তিসত্ত্বার বিকাশ : বিদ্যালয়ের অপর একটি কাজ হল সকল শিক্ষার্থীর সুপ্ত সম্ভাবনাময় ব্যক্তিসত্তার যথাযথ বিকাশ সাধন করা। বিভিন্ন পরিবার থেকে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে বিভিন্ন চাহিদা, সামর্থ্য, রুচি, আগ্রহ নিয়ে। বিদ্যালয় পরিবেশ সকল শিক্ষার্থীর বিভিন্ন চাহিদার পরিতৃপ্তি ঘটিয়ে ব্যক্তিসত্তার যথাযথ বিকাশে সহায়তা করে।
- বৃত্তিমূলক নির্দেশনা : বিদ্যালয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দেওয়া। শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করে। কর্মজীবনে সফল হতে গেলে যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক বৃত্তি নির্বাচনের প্রয়োজন হয়। বিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীরা বৃত্তিমূলক নির্দেশনা পেয়ে থাকে।
- শিক্ষামূলক নির্দেশনা : শিক্ষামূলক নির্দেশনা দান করা বিদ্যালয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সমাজের বিভিন্ন অংশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভের জন্য বিদ্যালয়ে আসে। বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষাগত ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে শিক্ষামূলক নির্দেশনা দানের মাধ্যমে সহায়তা করে।
- মূল্যায়ন : বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষার আর একটি কাজ হল শিক্ষার্থীর সামগ্রিক মূল্যায়ন করা। পঠন পাঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে তার পাশাপাশি চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ এবং নৈতিক মূল্যবোধের মূল্যায়ন বিদ্যালয় করে থাকে।
সমাজ কেন্দ্রিক কার্যাবলী-
- সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং উত্তরণে : বিদ্যালয় সমাজের মূল্যবান সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মূল্যবোধের সংরক্ষণ করে এবং সময়ের সাথে সাথে এগুলোর প্রচার, প্রসার ও বিকাশে সহায়তা করে। এটি সংস্কৃতির ভাণ্ডারকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে দেয়। অর্থাৎ বিদ্যালয় সংস্কৃতির এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালনে, এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ : ব্যক্তির সর্বাত্মক বিকাশের জন্য বিদ্যালয় নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এই বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে, একটি শিশুর সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির বিকাশ এবং তার দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক ইত্যাদি সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধিত হয়ে থাকে।
- মূল্যবোধের বিকাশ : বিদ্যালয় শিশুদের মধ্যে সততা, সহানুভূতি, ভালবাসা, সহযোগিতা ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করে থাকে, যা শিশুর উচ্চ মূল্যবোধের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। বিভিন্ন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে, একটি শিশুকে সামাজিক জীবনযাপনের শিক্ষা প্রদান করে।
- সামাজিক দায়বদ্ধতার বিকাশ : বিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান । এখানে শিক্ষার্থীর সবরকম সম্ভাবনা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং সে ভবিষ্যতে সামাজিক জীবনযাপনে সমর্থ হয়ে ওঠে। বিদ্যালয়কে সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়ে থাকে। কারণ, বিদ্যালয়ে একটি শিশু তার নিজ অনুভূতি অন্যদের সাথে আদান প্রদান করে, এই আদান-প্রদানে সে সামাজিক মূল্যবোধের ধারণা আয়ত্ত করে। এবং সে সমাজে নিজ দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য ও অনুভূতির শিক্ষা পায়। যা তার সামাজিক বিকাশে সহায়ক হয়।
- নাগরিকত্ব প্রশিক্ষণ : বিদ্যালয় শিশুর জন্য প্রথম নাগরিক সমাজ তৈরি করে। তাই শিশুরা একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি কর্তব্য ও নাগরিক অধিকার শেখে। তাই বিদ্যালয়ের অন্যতম সামাজিক কাজ হল শিশুকে নাগরিকত্বের পাঠদান করা।
- সামাজিকীকরণের শিক্ষা : বিদ্যালয় শিশুদের সমাজের নানান সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। সমাজের নানান নিয়ম, কানুন, নীতি সম্বন্ধে অবগত করে। একজন শিশুকে ব্যক্তি মানুষ থেকে সামাজিক মানুষে পরিণত করে।
বিদ্যালয় সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ (School is a Miniature of Society) :
বিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীর সবরকম সম্ভাবনা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং সে ভবিষ্যতে সামাজিক জীবনযাপনে সমর্থ হয়ে ওঠে। আধুনিককালে শিক্ষাকে শিশুকেন্দ্রিক করার উপর জোর দেওয়া হয়। এই জন্য বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম শিশুর চাহিদার উপর ভিত্তি করে রচনা করা হয়। কিন্তু শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সামাজিক পরিবেশের মধ্যেই সম্ভব। তাই বিদ্যালয়কে সমাজের প্রতিরূপ করে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মুখ্য উদ্দেশ্য হল সমাজের অতীত কৃষ্টিকে ধরে রাখা এবং তাকে ভবিষ্যতের নাগরিকদের মধ্যে সঞ্চালিত করা। সুতরাং শিক্ষা ও সমাজ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শিক্ষাবিদ জন ডিউই (John Dewey)-এর মতে বিদ্যালয় হল এক ধরনের আদর্শ, মার্জিত সুন্দর ও সুষম সমাজ। তিনি বলেছেন- “School is a simplified, purified and better balanced society”। ফ্রয়েবেল (Froebel) বিদ্যালয়কে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। আধুনিককালে সকল শিক্ষাবিদ বিদ্যালয় ও সমাজ জীবনের বিচ্ছিন্নতা মেনে নেননি এবং বিদ্যালয়কে সমাজেরই অংশ বা ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসাবে অভিহিত করেন। বিদ্যালয়কে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসাবে বিবেচিত করার কারণগুলো হল :
- বিদ্যালয় ও সমাজের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়, যেমন- সমাজ একজন ব্যক্তিকে সামাজিক জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়, অন্যদিকে বিদ্যালয় শিশুকে একত্রে বসবাসের শিক্ষা প্রদান করে। অর্থটি ভিন্ন হলেও মূল লক্ষ্য এক।
- বিবর্তন, পরিবর্তন ইত্যাদির প্রভাব সমাজ এবং বিদ্যালয় উভয় ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়।
- এছাড়া উভয়ের লক্ষ্যগত দিক থেকেও সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
- সমাজের মধ্যে মানুষের বাস, যারা সর্বদাই পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় রত থাকে। এবং এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যেদিয়ে ব্যক্তির সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। সেইরূপ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যেদিয়ে নিজেদের বিকাশ সাধন করে থাকে।
গৃহ এবং বিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between Home and School) :
যেহেতু গৃহ এবং বিদ্যালয় উভয়ই হল শিক্ষার সংস্থা এবং উভয়ই একজন ব্যক্তিকে আদর্শ ব্যক্তিত্বের আধিকারী একজন সামাজিক জীব হিসাবে গড়ে তুলতে আগ্রহী, সেহেতু তাদের লক্ষ্য ভিন্ন নয়।
অতীতে পারিবারিক শিক্ষার শিশুর সম্পূর্ণ বিকাশে উপযুক্ত না হওয়ার কারণেই বিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানের জন্ম। আগে পরিবারের যে দায়িত্ব ছিল বর্তমানে বিদ্যালয়ে সেই দায়িত্ত্ব পালন করে থাকে, পরিবারের শিক্ষাদানের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলি বিদ্যালয় পূরণ করে থাকে। আপনি অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে, সামাজিকভাবে উপযোগী উত্পাদনশীল কাজের অধীনে শিশুদের কলা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে পড়ানো হয়। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে ভাষা, গণিত, পরিবেশগত অধ্যয়নের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ‘আমি-বোধ’-এর পরিবর্তে ‘আমরা-বোধ’ বিকাশের ধারণা গড়ে ওঠে। এইভাবে স্কুল এমন একটি পরিবেশ প্রদান করে যেখানে শিশু সামাজিক আনুগত্য বিকাশের প্রাথমিক পাঠ শেখে। বিদ্যালয় পরিবার ও সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। স্কুলেই শিশু ‘আত্ম-শৃঙ্খলার’ মৌলিক বিষয়গুলো শেখে।
কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের দ্বারা শিশুর সার্বিক বিকাশের কাজ কঠিন হয়ে ওঠে। পরিবার যদি বিদ্যালয়কে সহায়তা করে তবে সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের কাজ সহজ হয়। কারণ বিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের পূর্বে শিক্ষার্থী বেশ কিছুটা সময় পরিবারে অতিবাহিত করে। একজন শিশুর ভাষার বিকাশ, শৃঙ্খলার ধারণা, নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশে পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও বিদ্যালয় যে সকল কাজ শিশুকে দেওয়া হয়ে থাকে যা শিশু গৃহে গিয়ে সম্পন্ন করে থাকে, সেক্ষেত্রে বাড়ির সকল সদস্য শিশুকে সেই কাজ করার পরিবেশ যদি তৈরি করে না দেয়, তবে শিশুর জ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। একজন শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য পরিবার একটি আদর্শ পরিবেশ রচনা করে থাকে। উপরিউক্ত সকল বক্তব্য বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে, দু’য়ের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান এবং এই দুই সংস্থা একে অপরের পরিপূরক।
বিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা (Limitations of School) :
আদর্শগত দিক থেকে বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি বা দায়িত্ব পালন করলেও বিদ্যালয়ের কাঠামোগত ও অবস্থানগত স্বল্পতার জন্য সবসময় ওই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাগুলো হলো :
- বিদ্যালয়ের একটি সামাজিক দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ সামাজিক বিকাশ বিদ্যালয়ে সম্ভব নয় । এরজন্য প্রয়োজন সামাজিক পরিবেশ। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা যে পারিবারিক পরিবেশ থেকে বিদ্যালয়ে আসে সেই পরিবেশের সঙ্গে বিদ্যালয় পরিবেশের অনেক দিক দিয়ে পার্থক্য বর্তমান। তাই বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ পরিবেশে সংক্ষিপ্ত সময়ে শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
- বিদ্যালয়ের গতানুগতিক পাঠদান পদ্ধতি এবং বৈচিত্রহীন পাঠক্রম শিক্ষার্থীর জীবন ও বিদ্যালয় শিক্ষার মধ্যে ঠিকভাবে সমতা বিধান করতে পারে না। ফলে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে না।
- বিদ্যালয় শিক্ষায় পাঠক্রমের অতিরিক্ত বোঝা এবং তাত্ত্বিক শিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের আনন্দ দিতে পারে না। ফলে বিদ্যালয় জীবন অনেক সময় শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে পারে না।
- বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বৈষম্যের নীতি অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। একই শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর চাহিদা, রুচি, সামর্থ্য, আকাঙ্খা, প্রক্ষোভ একই ধরনের হয় না। ফলে সকল শিক্ষার্থী শ্রেণি শিক্ষণে উপকৃত হতে পারে না।
- অনেক ক্ষেত্রে এক একটি বিদ্যালয়ের উপর অত্যধিক শিক্ষার্থীর চাপ শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অত্যধিক হওয়ার ফলে পড়াশোনার সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকে না।
- শিক্ষাদান কার্যকে সার্থক রূপদান করার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। বিদ্যালয়গুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা যায় ।
এই আলোচনা থেকে দেখা যায়, দেশ, সমাজ এবং গোষ্ঠী পক্ষে বিদ্যালয় অত্যন্ত কার্যকরী সংস্থা হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কোন একটি নির্দিষ্ট সংস্থা, তা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন কোন সময়ে তা এককভাবে শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে না। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সংস্থার প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। প্রথাগত শিক্ষার দায়িত্ব বিদ্যালয়ের উপর অর্পিত হলেও কৈশোরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিভিন্ন সামাজিক সংঘের দ্বারাও হয়ে থাকে। প্রায় সবধরনের শিক্ষাসংস্থা নিজস্বতা বজায় রেখে মানুষের জীবনব্যাপী শিক্ষার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। যেকোনো শিক্ষাসংস্থা মানুষের সর্বাঙ্গীন উন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়কের ভূমিকা পালন করে। সকল সংস্থারই কিছু না কিছু সমালোচনা মূলক দিক বর্তমান, কিন্তু তা বলে সেটার ভালো দিকগুলিকে আমরা অবহেলা করতে পারি না। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভূমিকা একলাইনে বলা অসম্ভব, এবং আধুনিক যুগে বিদ্যালয়ের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি একটি প্রথাগত শিক্ষার মাধ্যম। এই মাধ্যম হল ছোট ছোট অপরিপক্ক মস্তিষ্ককে পরিণত রূপদানের এক কেন্দ্র। শিক্ষাক্ষেত্রে এই মাধ্যম ছাড়া আমরা অচল।