অধ্যাপক Morris Ginsberg তাঁর “Essays in Sociology and Social Philosophy” গ্রন্থে সামাজিক পরিবর্তন সম্বন্ধে বলেছেন, “By social change I understand a change in social structure, e.g. the size of the society, the composition or balance of its parts or the type of its organization………….the term social change must also include changes in attitudes or beliefs, in so far as they sustain institutions and change with them”.
অধ্যাপক Kingsley Davis-এর মতে, ‘সামাজিক পরিবর্তন বলতে বোঝায় সমাজের গঠন ও কর্মধারায় পরিবর্তন’।
MacIver এবং Page-এর মতে, ‘সামাজিক সম্পর্কগুলির পরিবর্তনই সামাজিক পরিবর্তন’। সময় বা কালের ধারাবাহিকতার দ্বারাই সমাজের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করা যায়। সমাজ একটি প্রক্রিয়া কোন প্রক্রিয়াজাত বস্তু বিশেষ নয়।
According to M. E. Jones, “Social change is the term used to describe variation or modifications of any aspects of social process, social interaction of social organization”.
সামাজিক পরিবর্তনের সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যথা-
- সামাজিক পরিবর্তন হল সমাজের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন।
- সামাজিক পরিবর্তনে নানান বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়।
- এই পরিবর্তন কখন ধীর আবার কখন দ্রুতগতি সম্পন্ন।
- সামাজিক পরিবর্তনে সমাজের স্বাতন্ত্র্য ও সক্রিয়তা বজায় থাকে।
- সামাজিক পরিবর্তন হল সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফল।
উপরিউক্ত সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে, যে কোন সমাজের অন্তর্গত বিভিন্ন সদস্যদের একে অপরের সাথে সঙ্গতিবিধানের প্রচেষ্টার ফলে সমাজের অভ্যন্তরীণ সংগঠনে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, তাই হল সামাজিক পরিবর্তন।
- সাংস্কৃতিক উপাদান- সংস্কৃতি বলতে বোঝায় চিন্তাধারা, আচার-আচরণে এবং রীতি-নীতির একটি বিশেষ মানকে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রান্ত যে সংঘাত দেখা যায়, তা থেকে জন্ম নেয় এক নতুন মূল্যবোধের। ফলে সামাজিক সাংগঠনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, যাকে আমরা বলছি সামাজিক পরিবর্তন। সুতরাং সাংস্কৃতিক উপাদান সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়।
- প্রযুক্তিগত উপাদান- প্রযুক্তিগত উন্নতি বা অবনতি অনিবার্যভাবেই সমাজকে প্রভাবিত করে। কারণ প্রযুক্তির বিভিন্ন দিকের সঙ্গে মানুষের জীবিকা জড়িত আছে, ফলে এর সাথেও সামাজিক পরিবর্তন জড়িত আছে।
- জৈব উপাদান- জৈব উপাদান নির্ধারণ করে সমাজস্থ প্রত্যেকটি মানুষ, কে-কিভাবে বেঁচে থাকবে এবং নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে। তাই সমাজস্থ লোকের বেঁচে থাকার পদ্ধতি সমাজে পরিবর্তন আনে।
- জনসংখ্যাগত উপাদান- নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু-যুবক প্রভৃতির জন্ম ও মৃত্যুর হার সমাজের মধ্যে সর্বাধিক পরিবর্তন আনে। সমাজের অস্তিত্ব সমাজের মধ্যে বসবাসকারী মানুষকে ঘিড়ে, সেহেতু তাদের জন্ম ও মৃত্যুর হার বিশেষ করে সমাজকে প্রভাবিত করে।
- পরিবেশগত উপাদান- ওয়াটসনের মতে পরিবেশের সাথে প্রতিক্রিয়া করে শিশু তার আচরণ আয়ত্ত করে- তাই যদি কোন পরিবেশের পরিবর্তন হয় তাহলে মানুষের আচরণেরও পরিবর্তন হবে এবং এই পরিবর্তন আচরণ অবশ্যই সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।
- মনোবৈজ্ঞানিক উপাদান- মানুষ সবসময়ই কোন কিছু আবিষ্কার করতে চায় ও এদের আচার আচরণ প্রভৃতির মধ্যে ধারাবাহিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানুষের এই পরিবর্তনের জন্যই এর অনিবার্য প্রভাব এসে পড়ে সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে।
- ভৌগলিক উপাদান- অনুকূল ও প্রতিকূল জলবায়ু, উর্বর মাটি, অধিক ফসল উৎপাদিত স্থান, ধর্মীয় স্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানুষের আচার আচরণ, রীতি নীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রভাবে সমাজে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
- বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উদ্ভাবন- বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উদ্ভাবনের ফলে সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত হয়েছে। নানা আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন দেশ পরস্পর পরস্পরের নিকটে এসেছে, বিশ্বায়নের ধারণায় গতি এসেছে।
- শিক্ষাগত উপাদান- শিক্ষার সাহায্যে সামাজিক সংগঠনগুলির পরিবর্তন ঘটে, মূল্যবোধের পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, আবার মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ভেতর দিয়েও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে থাকে।
- সমাজে ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে চিন্তাভাবনার পার্থক্য।
- সমাজের মধ্যে বৈষম্য।
- মানুষের মধ্যে নতুন সংস্কৃতি কিংবা চিন্তাধারায় পরিবর্তন না আনার মনোভাব, অর্থাৎ যা চলে আসছে সেটাই বয়ে নিয়ে যাওয়া।
- সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাভোগী মানুষ আছেন যারা পরিবর্তন চান না।
- সামাজিক পরিবর্তনে একটি অন্যতম প্রধান বাঁধা হল সাংস্কৃতিক বিছিন্নতা।
- চট্টরাজ, অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ। শিক্ষামুখী সমাজবিজ্ঞান। সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, পৃষ্ঠা : ১২৩-১৩১
- তরফদার, ড. মঞ্জুষা। শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। কে. চক্রবর্তী পাবলিকেশনস্, পৃষ্ঠা : ৬৬-৭৫
- চক্রবর্তী, ড. সোনালী। শিক্ষার সমাজ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। সোমা বুক এজেন্সি, পৃষ্ঠা : ১২৪-১৩৪