কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ, যে কোন রাশিমালার মানগুলি সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশে সহায়তা করে। এই পরিমাপটি রাশিমালার একটি প্রতিনিধি স্থানীয় মান। কিন্তু শুধুমাত্র গড়, মধ্যমান এবং ভূষিষ্টক দ্বারা রাশিমালার সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা গেলেও তাদের দ্বারা রাশিমালার সবরকম ধর্ম প্রকাশ করা যায় না। দেখা গেছে দুটি বণ্টনের গড় এবং মধ্যমান একই, কিন্তু বিস্তৃতির মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। তাই এই বিস্তৃতির পার্থক্যের জন্য কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ যথার্থ হয়ে না, তাই কোন রাশিমালার বিস্তৃতি বোঝানোর জন্য যে সব পরিমাপগুলি ব্যবহার করা হয়, তাদের বলা হয় বিষমতার পরিমাপ।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কেন্দ্রীয় প্রবণতার মানের মধ্যেকার বিস্তারকে বলে বিষমতা, আর এই বিস্তার নির্ণয় করার জন্য যে পরিমাপের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে, তাই হল বিষমতার পরিমাপ।
বিষমতার পরিমাপের প্রকারভেদ :-
রাশিবিজ্ঞানে বিষমতার পরিমাপ 5 ধরনের। যথা- প্রসার (Range), গড় বিচ্যুতি (Mean Deviation), আদর্শ বিচ্যুতি (Standard Deviation), চতুর্থাংশ বিচ্যুতি (Quartile Deviation), ভেদাঙ্ক (Variance)।
প্রসার (Range)
প্রসার হল কোন স্কোরগুচ্ছের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্কোরের ব্যবধান। সাধারণ অর্থে কোন স্কোরগুচ্ছের সর্বোচ্চ স্কোর থেকে সর্বনিম্ন স্কোরকে বাদ দিলে যে মান পাওয়া যায়, তাই হল সেই স্কোরের বিস্তৃতি।
সূত্র = UL – LL
ধর্ম –
- প্রসার কেবল স্কোরের ঊর্ধ্ব ও নিম্ন সীমার মধ্যেকার ব্যবধান ব্যক্ত করে।
- প্রসার দ্বারা মধ্যবর্তী স্কোর সম্পর্কে ধারনা করা যায়।
- কোন স্কোরগুচ্ছের ব্যাপক তাৎপর্য নির্ণয়ে এটি ব্যবহারযোগ্য নয়।
গড় বিচ্যুতি (Mean Deviation)
কোন রাশিমালার প্রত্যেক স্কোর থেকে ওই রাশিমালার গড়মান বিয়োগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে বলে বিচ্যুতি। আর গড় বিচ্যুতি হল সমস্ত বিচ্যুতিগুলির গড় মান।
সূত্র –
For Ungrouped Data
For Grouped Data
তাৎপর্য –
কোন রাশিমালার স্কোরগুলির গড়ের মধ্যকার একটা গড়পড়তা পার্থক্য আমরা গড় বিচ্যুতির মাধ্যমে নির্ণয় করে থাকি। এই গড় বিচ্যুতির দ্বারা রাশিমালার অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝা যায়। কিন্তু এই পরিমাপটি গাণিতিক দিক থেকে যুক্তিসম্মত নয়, তাই আধুনিক রাশিবিজ্ঞানে গড় বিচ্যুতির গাণিতিক মূল্য নেই বললেই চলে। এবং ব্যবহার ও হয়ে না।
আদর্শ বিচ্যুতি (Standard Deviation)
গড় বিচ্যুতির ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে বিচ্যুতির চিহ্নসমূহ বর্জন করা হয়ে, যা বীজগণিতের দিক থেকে ঠিক নয়। আদর্শ বিচ্যুতিতে এই গাণিতিক ত্রুটি বর্গকরণের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। এর ফলে তথ্যের ঋণাত্মক গুনাবলি দূরীভূত হয় এবং মোট যোগফল ধনাত্মক হয়। অতএব কোন পরিসংখ্যানের গাণিতিক গড় থেকে পরিসংখ্যানের প্রতিটি তথ্যের ব্যবধানের মোট বর্গকে মোট পরিসংখ্যান (N) দ্বারা ভাগ করে ভাগফলের বর্গমূল করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে বলে আদর্শ বিচ্যুতি।
সূত্র –
ধর্ম –
- আদর্শ বিচ্যুতি গড়ের মতোই প্রত্যেকটি স্কোরের বা রাশির মানের উপর নির্ভরশীল। রাশিমালার একটি স্কোরের পরিবর্তন ঘটলে প্রতিটি স্কোর এর বিচ্যুতির পার্থক্য ঘটে বলে সম্যক বিচ্যুতির পরিবর্তন হয়। সুতরাং সম্যক বিচ্যুতি রাশিমালার প্রকৃতমানের উপর নির্ভরশীল।
- রাশিমালার মধ্যে যদি এমন স্কোর থাকে যা অন্যান্য স্কোর থেকে অনেক বেশী, সেক্ষেত্রে আদর্শ বিচ্যুতির পরিবর্তন ঘটবেই।
- প্রত্যেক স্কোরের সঙ্গে কোন নির্দিষ্ট মান যোগ বা বিয়োগ করলে রাশিমালার সম্যক বিচ্যুতির মান পরিবর্তন হয় না।
- রাশিমালার প্রত্যেকটি স্কোরকে যদি নির্দিষ্ট মান দিয়ে গুন বা ভাগ করা হয় সেক্ষেত্রে সম্যক বিচ্যুতির মান ও অনুরূপভাবে পরিবর্তিত হয়।
চতুর্থাংশ বিচ্যুতি (Quartile Deviation)
কোন পরিমাপক স্কেলে বিন্দুর নীচে যে শতকরা 50 ভাগ স্কোর থাকে, তাকে বলা হয় মধ্যমান (Median)। এই মধ্যমানকে Q2 বা P50 বিন্দু হিসাবেও প্রকাশ করি। অনুরূপভাবে পরিমাপক স্কেলের যে বিন্দুর নীচে 25% স্কোর থাকে, তাকে বলা হয় প্রথম চতুর্থাংশ বিন্দু বা Q1 বা P25 (First Quartile)। যে বিন্দুর নীচে 75% স্কোর থাকে, তাকে বলা হয় তৃতীয় চতুর্থাংশ বিন্দু বা Q3 বা P75 (Third Quartile)।
নিম্নের চিত্রে Q1 এর অবস্থান দেখানো হয়েছে। পরিমাপক স্কেলে বিন্দু দুটির দূরত্বকে বলা হয় আন্তঃ
চতুর্থাংশ বিন্দু দূরত্ব (Inter Quartile Range) অর্থাৎ Q3 – Q1 বা P75 – P25 এর দূরত্বই হল আন্তঃ চতুর্থাংশ বিন্দু দূরত্ব। এই দুরত্বের অর্ধেক দৈর্ঘ্যকে বলা হয় চতুর্থক বিচ্যুতি (Quartile Deviation)।
এই ধারনা অনুযায়ী চতুর্থক বিচ্যুতি বা Q নির্ণয়ের সূত্র হল–
Q = (Q3 – Q1) / 2
ব্যবহার –
চতুর্থক বিচ্যুতিকে বিষমতার পরিমাপ হিসাবে আমরা রাশিমালার মধ্যবর্তী শতকরা 50 ভাগ স্কোর সম্পর্কে ধারনা করতে পারি। আগের পাতার চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে, চতুর্থক বিচ্যুতির দ্বারা সম্পূর্ণ বণ্টনটিকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। মধ্যের 50% অংশকে বলা হয় স্বাভাবিক পারদর্শিতার স্তর। নীচের 25% অংশকে কে নিম্ন পারদর্শিতার স্তর এবং উপরের 25% কে উচ্চ পারদর্শিতার স্তর বলা হয়। এই জন্যই চতুর্থক বিচ্যুতি নির্ণয় করতে গেলে মধ্যবর্তী 50% এর বা (Q3 – Q1) এর গড় নির্ণয় করতে হয়। সেই জন্য Q এর সূত্রটি হল। Q = (Q3 – Q1) / 2
ভেদাঙ্ক (Variance)
যখন দুটি দলের মধ্যে কোন অভীক্ষা একই গাণিতিক গড় পাওয়া যায় তাদের আদর্শ বিচ্যুতি বা SD সরাসরি তুলনা করা সম্ভব। কিন্তু যখন দুটি দলের কোন অভীক্ষার একই গড় পাওয়া যায় না, তখন দলের আদর্শ বিচ্যুতি সরাসরি তুলনা করা সম্ভব হয় না। তখনই প্রয়োজন হয় ভেদাঙ্ক নির্ণয়ের।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
- আচার্য, অধ্যাপক পূর্ণেন্দু। শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়ন ও নির্দেশনা। শ্রীতারা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা : ৮৬ – ৯৯
- ইসলাম, ড. নূরুল। শিক্ষায় মূল্যায়ন ও পরিমাপ। শ্রীধর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা : ১৭৯ – ১৯৭
- পাল, ড. গোবিন্দ পদ., মিত্র, ড. গঙ্গারাম। শিক্ষায় মূল্যায়ন। নব প্রকাশনী। পৃষ্ঠা : ৭৪ – ৭৮