Kd's e-pathsala Psychology of Adjustment মাদকাসক্ত বলতে কি বোঝো, মাদকাসক্তির কারণ, মাদকের ধরণ, মাদকাসক্তির লক্ষণ

মাদকাসক্ত বলতে কি বোঝো, মাদকাসক্তির কারণ, মাদকের ধরণ, মাদকাসক্তির লক্ষণ



মাদকাসক্তি বর্তমান সমাজ জীবনের এক অতি জটিল সমস্যা। এটি জেলা, রাজ্য কিংবা দেশের সমস্যা নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা রুপে চিহ্নিত হয়েছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ভাবী নাগরিকদের জীবন রক্ষায় ভারতের মানব সম্পদ মন্ত্রক ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাদকাসক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রূপে বর্ণনা করেছে।

সাধারণত মাদক দ্রব্য হল এমন একটি পদার্থ, যা অল্পমাত্রায় গ্রহণ করলে দেহে এবং মনে নানান রুপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে থাকে, এবং এছাড়া এমন কিছু মাদক রয়েছে যা ব্যাক্তির জীবনে প্রতিষেধক রূপে কিংবা সাময়িক নিরাময় প্রদান করে থাকে। কিন্তু এই মাদক দ্রব্য প্রতিদিন গ্রহণ করলে তার প্রতি আসক্তি জন্মায়। বস্তুত মাদক হল এমন একটি পদার্থ যেটি প্রতিদিন গ্রহণ করলে, তার প্রতি আসক্তি জন্মায় এবং আসক্তি ব্যাক্তির মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের মানসিক বিকার দেখা দেয়। 

 

একাকীত্ব, অবসাদ, কেরিয়ারে বার্থ্যতা, পারিবারিক অশান্তি, বন্ধুবিচ্ছেদ, প্রেমে আঘাত ইত্যাদি কারণে যেমন মানুষ ড্রাগের নেশায় পড়ে তেমনি নিছক কৌতূহলের বশে বা মজা করার ঝোঁকে (Fun loving) কমবয়সী ছেলে-মেয়েরা ড্রাগের নেশার কবলে পড়ে।

 

ড্রাগ বা মাদক দ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যাথা দূর হয় (কেউ কেউ বলেন শারীরিক আবার কেউ কেউ বলেন শারীরিক ও মানসিক তবে, আদেয় মানসিক ব্যাথা দূর হয় কি না তা নিয়ে আমার মনে দ্বন্দ্ব আছে, তবে হ্যাঁ কিছু সময়ের জন্য ব্যথার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়), খিদে লাগা বা সাধারণ জৈবিক প্রবৃত্তিগুলো দমন করা যায় এবং নিদ্রাচ্ছন্নতা বোধ হয়। এর ফলে মাদক সেবনকারী ব্যাক্তি তার নিজস্ব পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাময়িকভাবে কল্পনার জগতে বিচরণের অনন্দ উপভোগ করে থাকে। সে বাস্তব জগতের বেদনা, কামনা, অতৃপ্ত হতাশা সবকিছুকে কাটিয়ে সব কিছুকে কাটিয়ে এক কাল্পনিক মানসিক পরিতৃপ্তি লাভ করে।

 

ড্রাগ প্রধানত ছয় প্রকার। যথা-

  1. চেতনা-নাশক এবং বেদনা উপশমকারী। যেমন- আফিম, মরফিন, হেরইন, পেথিডাইন (Pethidine)
  2. উত্তেজক মাদকদ্রব্য। যেমন- কোকেন, অ্যামফেটামিন, ক্যাফেইন।
  3. অবসাদ সৃষ্টিকারী মাদক। যেমন- ডাইজেপাম, ক্লোনাজেপাম, ট্রায়াজোলাম।
  4. উত্তেজনা প্রশমনকারী ড্রাগ। যেমন- ডাইজেপাম, টেমাজেপাম, আলপ্রাজোলাম
  5. বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদক। যেমন- ক্যানাবিস (গাঁজা, হাসিস, ভাং, মারিজুয়ানা), LSD.
  6. প্রশ্বাসের সাথে গৃহীত বা বাষ্প জাতীয় মাদক। যেমন- থিনার, সিগারেট, পেন্ট, আঠা, নেইল পালিশ রিমুভার।


বয়স, সামাজিক সন্মান ও প্রতিপত্তি, আর্থিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোনই পার্থক্য দেখা যায় না। কখনও কোন বাবা-মা যদি মনে করেন আমাদের পরিবারের ছেলে/মেয়ে এমন কাজ করতেই পারে না- সেক্ষেত্রে তাঁরা ভুল করবেন। এই নেশা যে কোন কাউকে যে কোন সময়েই আঁকড়ে ধরতে পারে। এর সাধারণ কিছু লক্ষণ হল-

  • কর্মক্ষেত্রে, স্কুল-কলেজে বিনা কারণে কামাই।
  • পড়াশোনায় ক্রমশ ফল খারাপ করা।
  • যে কোন কাজেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলা।
  • মিথ্যে বলা, টাকা বা দামি জিনিস চুরি যাওয়া / হারিয়ে যাওয়া।
  • পারিবারিক কাজে অংশ না নেওয়া, ভুলে যাওয়া।
  • সাজপোশাক, পরিচ্ছন্নতা ব্যাপারে লক্ষ্য না থাকা।
  • একা থাকা, বাথরুমে বা গোপনস্থানে বেশী সময় কাটানো।
  • নতুন নতুন বন্ধু পাতানো ও রহস্যজনক আচরণ করা।
 

এই ড্রাগের নেশা ক্রমশ মারাত্মক আকার ধারন করার আগেই বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ এর পেছনে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেও ড্রাগ ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক লাভ জড়িত এরা কাউকে ড্রাগ-এর নেশা ছাড়তে দিতে চায় না। কাজেই পরিবারের সদস্যদের উচিত এই বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

________________________