ইংরেজি “Bipolar” বা “বাইপোলার”-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল “দ্বিমেরু”, অর্থাৎ এখানে মানুষের মানসিক সমস্যার দুটি মেরু বা পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। এই ধরণের মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক আচরণ বা অভিব্যক্তি দুটি ভিন্ন সময়ে পুরোপুরি ভিন্ন হয়ে ওঠে। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে যারা ভুগছেন মেজাজ বা ‘মুড’ বিশাল পরিবর্তন চক্রে আবর্তিত হয়। এক এক সময় উত্তেজনা ও উন্মত্ততায় মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে (Manic Phase), আবার অন্য সময়ে অহেতুক দুঃখের ভারে অবসাদগ্রস্ত (Depression) হয়ে পড়ে।
এই প্রকার ডিসঅর্ডার (Manic Phase) একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। ম্যানিক অবস্থায় রোগী অনন্দ ও উত্তেজনায় ভরপুর থাকে। বাড়াবাড়ি রকমের আত্মবিশ্বাসের ফলে নানান অসম্ভব এবং ভয়াবহ কাজেও আত্মনিয়োগ করতে পারে। ঘুমানোর প্রয়োজনবোধ করে না, টাকার অপব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করে না। এই অবস্থাটা চলে গিয়ে মনটা হয় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, অথবা উল্টো দিকে চলে গিয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়। নৈরাশ্য তখন পেয়ে বসে, কোনোকিছু তখন পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা বা কোনও ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া তখন কঠিন হয়। স্মৃতিশক্তিও তখন দুর্বল হয়ে পড়ে। আগে যা ভালো লাগতো, তখন আর তা ভালো লাগে না। এই পর্যায়ে লক্ষণগুলো এক একজন ব্যক্তির কাছে প্রায় ভিন্নভাবে প্রদর্শিত হয়। এই স্তরে লক্ষণগুলি হল-
১) অনেকবেশি কথা বলা এবং কথার মাঝে কাউকে কথা বলতে দেয় না।
২) গল্প ও আড্ডায় মূল বিষয়বস্তু থেকে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
৩) সর্বদাই ভিন্ন ভিন্ন চিন্তায় মগ্ন থাকে।
৪) যেকোনো কাজে অতিরিক্ত আগ্রহ এবং পারদর্শিতার পরিচয় দেওয়া।
৫) অনেক বেশি আবেগ প্রবণ হয়ে পরা।
৬) হিসেব ছাড়া খরচা করা বা সব অর্থ উজাড় করে দেওয়া।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে এই পর্যায় তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই পর্যায়ে ব্যক্তির স্বতন্ত্রতা এবং বিচারশক্তি হ্রাস পায়। যে কেউ তাকে দিয়ে যেকোনো কাজ করিয়ে নিতে পারে। এই প্রকার ব্যাধি নিরন্তর চিকিৎসার প্রয়োজন, এমনকি মন যখন ফুরফুরে থাকে তখনও ওষুধ না বন্ধ করে চালিয়ে যেতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে নিরন্তর পরামর্শদান প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলেও সুফল পাওয়া যেতে পারে।
______________________________