পরিমাপের তাৎপর্য নির্ণয় সম্পর্কিত ত্রুটি দূর করার প্রক্রিয়াকেই অভীক্ষার আদর্শায়ন বলে।অভীক্ষার একটি বিশেষ গুন হল তার মানদণ্ড। কারণ কোন মানদণ্ড সাফলাঙ্ক্যকে ছাড়া তুলনা করা সম্ভব নয়। মূলত একটি প্রাসঙ্গিক মান ধরে নিয়ে তার সাথে সাফলাঙ্ক্যের তুলনা করা হয়ে থাকে। এবং এই প্রাসঙ্গিক মানকেই নর্ম (Norm) বলা হয়। যে কোন আদর্শায়িত অভীক্ষার নর্ম থাকা প্রয়োজন।
নর্ম-এর প্রকারভেদ
কোন অভীক্ষার আদর্শমান বা নর্ম চার প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
- শতাংশ নর্ম
- আদর্শস্কোরের নর্ম
- শ্রেণীগত নর্ম
- বয়স ভিত্তিক নর্ম
- শতাংশ নর্ম : অভীক্ষার্থীদের মূল স্কোরগুলিকে শতাংশ সারিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দ্বারা বোঝা যায় দলের মধ্যে অভীক্ষার্থীর স্থান কোথায়।
- আদর্শস্কোরের নর্ম : অভীক্ষার্থীদের মূল স্কোরগুলিকে একটি আদর্শ বণ্টনের স্কোরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দ্বারা বিভিন্ন অভীক্ষার্থীর ফলের তুলনা করা যায়।
- শ্রেণীগত নর্ম : কোন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপর অভীক্ষা প্রয়োগ করার ফলে প্রাপ্তস্কোর গুলির গড়কে বলা হয়, শ্রেণীর নর্ম। তারপর শ্রেণী ও নর্মের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কোন শিক্ষার্থী স্কোর যে নর্মের সহিত সমান, সেই নর্মের আনুষাঙ্গিক শ্রেণীটি হল তার উপযুক্ত শ্রেণী। ধরা যাক, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর নর্ম যথাক্রমে 120 এবং 140। কোন শিক্ষার্থীর নম্বর 130 হলে বলা যাবে যে, 7.5 শ্রেণীর উপযুক্ত নম্বর পেয়েছে।
- বয়স ভিত্তিক নর্ম : আধুনিককালে মানসিক বয়সের অনুকরণে শিক্ষামূলক বয়স এবং অর্জনমূলক বয়সের পরিকল্পনা প্রয়োগ করা হচ্ছে।
অভীক্ষার স্কোরে নর্ম ব্যবহার করা হয় কেন ?
যে কোন সু-অভীক্ষার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংব্যাখ্যান ও তুলনীয়তা। এর অর্থ হল যে অভীক্ষাটির ফলাফলকে ঠিকমত ব্যাখ্যা করা যাবে এবং একজন অভীক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোরের সঙ্গে অপর অভীক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোরের তুলনা করা সম্ভব হবে। এরজন্য অভীক্ষাটি একটি বিজ্ঞানসম্মত মান বা নর্ম থাকা প্রয়োজন।
সাধারণত স্কুল-কলেজে যে সব পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে, সেগুলির এধরনের কোন বিজ্ঞানসম্মত মান নেই। ফলে এই সব পরীক্ষায় যদি কেউ 20 বা 60 বা 90 পায় তবে তার সেই স্কোরের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়া চলে না, এসব ক্ষেত্রে সাধারণত একটি পাশ মার্ক (যেমন- 30 বা 35) ঠিক করে দেওয়া থাকে।
ধরাযাক, একটি রাজ্যে যত ছেলেমেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে তাদের থেকে কিছু জেলার কিছু বিদ্যালয় থেকে কিছু ছাত্রছাত্রীদের (অঙ্কের নম্বর) নমুনা হিসাবে বেছে নিয়ে তাদের উপর একটি অভীক্ষা প্রয়োগ করে, তাদের সাফল্যের একটি মান বা নর্ম ঠিক করা হয়। এবং এটি কেই সার্বজনীন হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। মনে করা যাক, এই নর্মটি হল 45। এবার সপ্তম শ্রেণীর কোন একজন ছাত্র অঙ্কে 60 পেয়েছে। তাহলে আমরা তৎক্ষণাৎ বলতে পারি যে, সারা রাজ্যে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই ছাত্রের স্থান কোথায়। আবার মনে করা যাক এই নর্মটি হল 45, সেহেতু এই ছাত্রটির অঙ্কের জ্ঞান সপ্তম শ্রেণীর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে কম বা বেশী এবং কতটা কম বা বেশী তাও আধুনিক পরিসংখ্যান পদ্ধতির দ্বারা নির্ণয় করা যায়।
নর্ম-এর সুবিধা
- তৈরি ও প্রয়োগ খুবই সুবিধাজনক।
- এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।
- একজন শিক্ষার্থীর সাফল্যাঙ্কের ভিত্তিতে তার অবস্থান জানা যায়।
- এবং সেই অবস্থানের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দলে ভাগ করা সম্ভব।
নর্ম-এর অসুবিধা
- অভীক্ষার মানদণ্ড সকল ক্ষেত্রে সমান না হওয়ায়, বিকাশের সঠিক দিক নির্দেশ সম্ভব নয়।
- যে সকল মানদণ্ড বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে না, তাদের ক্ষেত্রে এই মানদণ্ড প্রাসঙ্গিক নয়।
- এই মানদণ্ড সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি-
- ইসলাম, ড. নূরুল। শিক্ষায় মূল্যায়ন ও পরিমাপ। শ্রীধর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা : ১৩৪ – ১৩৮
- পাল, ড. গোবিন্দ পদ., মিত্র, ড. গঙ্গারাম। শিক্ষায় মূল্যায়ন। নব প্রকাশনী। পৃষ্ঠা : ৪০ – ৪১
________________________