Open Book Examination



একটি ওপেন বুক পরীক্ষা (Open Book Examination) এমন একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি যা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যা শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় শ্রেণি থেকে প্রাপ্ত নোট, সংক্ষিপ্তসারগুলি বা একটি “Memory Aid”, পাঠ্যপুস্তক বা অন্যান্য অনুমোদিত উপাদান গুলিকে ব্যবহার করতে পারে। একটি ওপেন বুক পরীক্ষার অর্থ এইও হতে পারে যে শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিক পরীক্ষায় বসার আগেই তাদের কাছে পরীক্ষার প্রশ্নগুলি সরবরাহ করা, এক্ষেত্রে তারা তাদের বাড়ি থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারে। ওপেন-বুক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের নোট, পাঠ্য বা সংস্থান সামগ্রীর পরীক্ষার পরিস্থিতিতে নিতে দেয়। তারা তথ্য এবং জ্ঞান সন্ধান এবং প্রয়োগের তাদের দক্ষতার পরীক্ষা করে, তাই প্রায়শই এমন বিষয়গুলিতে ব্যবহৃত হয় যেগুলি লিখিত উপকরণগুলির জন্য সরাসরি রেফারেন্সের প্রয়োজন হয় যেমন আইন সংবিধি, পরিসংখ্যান বা সংসদের আইন।

 

ওপেন বুক পরীক্ষার ধরন :

সনাতন পরীক্ষা ব্যবস্থা- সীমিত সময়ের পরীক্ষা, বিভিন্ন সংস্থান এবং রেফারেন্স বইয়ের সাহায্যে।
নিজ বাড়ি  হতে পরীক্ষা- প্রশ্নগুলি হস্তান্তর করা হয়, ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণী নোট ও পুস্তক থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে,  নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র পরীক্ষকের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

 

ওপেন বুক পরীক্ষার উদ্দেশ্য:
ওপেন বুক পরীক্ষা মূল উদেশ্য হ’ল শিক্ষার্থী বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতার বিকাশ সাধন, সেহেতু শিক্ষকরা এমনভাবে প্রশ্নগুলি রচনা করে থাকেন যা শিক্ষার্থীদের আরও সমালোচনামূলক এবং বিশ্লেষণাত্মক উপায়ে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যাতে শিক্ষার্থীদের উচ্চস্তরের চিন্তাভাবনার দক্ষতা অর্জিত হয়।

 

ওপেন বুক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রচনাকালে বিবেচ্য বিষয় :

  1. ওপেন বুক পরীক্ষার প্রশ্নগুলিতে কেবল জ্ঞানের প্রত্যাহার না করে জ্ঞানের ব্যাখ্যা, প্রয়োগ, বোধগম্যতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার দক্ষতার মূল্যায়ন করতে হবে।
  2. কোন প্রকার ঘটনা-ভিত্তিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলিতে সেই ঘটনা সাথে সম্পর্কিত চিত্র ব্যবহার করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক যুক্তি ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারে।
  3. শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি এবং প্রশ্নের ব্যাখ্যায় সময়ের অপচয় যাতে রোধ করা যায়, তার জন্য প্রশ্নের ভাষা হবে সহজ ও সরল।
  4. এমনভাবে প্রশ্নপত্রটি রচনা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যপুস্তক বা শ্রেণীনোটগুলি থেকে তথ্যটি সন্ধান  করে উত্তর লিখতে পারে।
  5. শিক্ষার্থীর কোন দিকের জ্ঞান বা দক্ষতার পরিমাপ করতে চাইছেন? সেটা মাথায় রেখেই শিক্ষককে প্রশ্নপত্রের  নক্সা তৈরি করতে হবে।

 

ওপেন বুক পরীক্ষা কেন বাকি পরীক্ষার থেকে আলাদা-
একটি ওপেন বুক পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর মুখস্থ করার ক্ষমতার সাথে সাথে আরও অনেক দিকের পরীক্ষা করতে পারে। একটি প্রশ্নপত্রকে সমালোচনামূলকভাবে চিন্তন করার সময়, শিক্ষার্থীদের প্রাসঙ্গিক তথ্য দ্রুত খুঁজে পাওয়া এবং তারপরে জ্ঞানকে বোঝার, বিশ্লেষণ করার এবং প্রয়োগ করার দক্ষতারও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কেবল পাঠ্য থেকে তথ্য অনুলিপি করার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন হয়। কোন ফর্মুলা ভুলে গেলে বা মনে না পরলে, পাঠ্যপুস্তক সামনে থাকার ফলে তারা ভুল উত্তরদান থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে, তবে কেবল সত্যটি সঠিক হওয়াও তারা ভাল নম্বর পাবে না। তারা কীভাবে তথ্য সনাক্ত করে, প্রয়োগ করে এবং ব্যবহার করে তাও গুরুত্বপূর্ণ।

 

ওপেন বুক পরীক্ষার সুবিধা :

  1. এই প্রকার পরীক্ষা সময়ের সাশ্রয় করে, Auto-grade পদ্ধতি MCQ-পূরণে সহায়তাদানে কিংবা কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা হওয়ার দরুণ, তা প্রশ্নপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সময়ের সাশ্রয় করে।
  2. কাগজের সাশ্রয় হয় এবং মুদ্রণের অর্থও সাশ্রয় হয়।
  3. শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণাত্মক ও সমলোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে।
  4. মুখস্থ ভিত্তিক শিখনের প্রতি বিরূপ মনোভাব গড়ে তোলে।
  5. জ্ঞান পুনরুদ্ধারের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে। এছাড়াও বিভিন্ন তথ্যের অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে।
  6. শিক্ষার্থীদের ভুল উত্তর দানের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।

 

ওপেন বুক পরীক্ষার অসুবিধা :

  1. শিক্ষার্থীর উপর নজদারি চালানো যায় না।
  2. জালিয়াতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
  3. শিক্ষার্থীরা এই প্রকার পরীক্ষায় নিয়মিত পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়, তার বদলে উত্তর পত্রের অনুলিপি তৈরিতে মন দেয়।
  4. সকল শিক্ষার্থী সমানভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত আছে কি না তা বিচার করা কঠিন। এছাড়াও কিছু বই খুব ব্যয়বহুল এবং লাইব্রেরীতেও সংখ্যা সীমিত।
  5. প্রশ্নপত্র, বই, নোট সবকিছু রাখার জন্য ডেস্ক স্পেস প্রয়োজন, কিন্তু সবক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না।

 

ওপেন-বুক পরীক্ষা সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা :

  1. ওপেন-বুক পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রথম ভ্রান্ত ধারণা হল এই পরীক্ষা ব্যবস্থা গতানুগতিক পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে।
  2. ওপেন-বুক পরীক্ষা সম্পর্কে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাটি হল যে অধ্যয়নের দরকার নেই। এই ধারণা ভুল, কারণ অধ্যায়ন বিনা পুস্তকের কোন অংশে কোন প্রশ্নের উত্তর আছে তা বলা সম্ভব নয়।
  3. শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় কেবল বইটি থেকে সরাসরি অনুলিপি করতে পারে বা করে থাকে এটি চৌর্যবৃত্তির সমান, এটিও একটি ভুল ধারণা। ওপেন-বুক পরীক্ষায়, রিসোর্স উপকরণগুলি শিক্ষার্থীর জন্য উপলব্ধ করা হয়, এটাই এই পরীক্ষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য, তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী হতে নতুন কিছু আশা করা যেতেই পারে।

 

ওপেন বই পরীক্ষা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই শব্দের আসল অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পারে। এটি সত্য যে ওপেন বই পরীক্ষা দাবিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কিছুটা সময় এবং প্রচেষ্টা লাগবে তবে পরিবর্তনগুলি অনিবার্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *