Kd's e-pathsala Measurement and Evaluation অভীক্ষা কাকে বলে ? সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য

অভীক্ষা কাকে বলে ? সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য



অভীক্ষা বলতে বোঝায় এমন কতগুলি সুসংগঠিত পদ বা প্রশ্নগুচ্ছ যা কাঠিন্যের মান অনুযায়ী সাজানো থাকে এবং যার দ্বারা শিক্ষার্থীর পরিমাণগত ও গুণগত পরিবর্তনের পরিমাপ ও মূল্যায়ন করা যায়। মনোবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাগত অভীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির পারদর্শিতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যায়। এই অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সামনে কতকগুলি উদ্দীপককে উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষার্থী স্বাভাবিক ভাবেই এই সকল উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়। এর দ্বারা শিক্ষার্থীর মনোবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাগত বিশেষ বৈশিষ্ট্য জানা যায়।

মনোবিদ মার্শেল মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,- ” The psychological tests is stimuli selected and organized elicit response which will reveal certain psychological characteristics in the person who take them.”

 

সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য 

মনোবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক পরিমাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ও কৌশল হচ্ছে অভীক্ষা।অভীক্ষা হল এক প্রকারের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। তাই এটি নির্ভুল হওয়া উচিত। কোন অভীক্ষাকে তখনই সু-অভীক্ষা বলা যাবে যখন সেটি ত্রুটিপূর্ণ ও বিজ্ঞান সম্মত হবে। কিছু নিয়ম-নীতি এবং শর্তের উপর অভীক্ষার পরিমাপের সফলতা ও যথার্থতা নির্ভর করে। কোন অভীক্ষাকে প্রয়োগ করার পূর্বেই তার নির্ভুলতা যাচাই করা আবশ্যক। সেহেতু সু-অভীক্ষার যে বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হলে তাকে সু-অভীক্ষা বলা যাবে, সেগুলি হল- 



1. অভীক্ষার যথার্থতা :- সু-অভীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যথার্থতা। একটি অভীক্ষাকে যথাযথ তখনই বলা হবে, যখন সেটি যা পরিমাপের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তাই পরিমাপ করছে। যেমন- কোন অভীক্ষা যদি শিক্ষার্থীর ইতিহাসের জ্ঞান পরিমাপের জন্য গঠিত হয়, তবে তা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর ইতিহাসের জ্ঞানের মূল্যায়ন করবে। সেক্ষেত্রে হাতের লেখা কিংবা বানান ভুল ইত্যাদি বিষয়গুলিকে দেখবেন না। যথার্থতা চার প্রকার। যথা- a) বিষয়বস্তু নির্ভর যথার্থ (Content Validity), b) সংগঠনমূলক যথার্থতা (Construct Validity), c) ভবিষ্যৎ সম্ভাবনামূলক যথার্থতা (Predictive Validity), d) সহ-অবস্থানমূলক যথার্থতা (Concurrent Validity)।

 

2. অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা :- সু-অভীক্ষার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নির্ভরযোগ্যতা। কোন অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা বলতে বোঝায়, ঐ অভীক্ষা প্রয়োগ করে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা নির্ভুল অথবা বিশ্বাসযোগ্য কিনা। অর্থাৎ সাধারণভাবে বলা যেতে পারে, একই অভীক্ষা একই ব্যক্তির উপর সময়ান্তরে প্রয়োগ করে যদি একই ফল পাওয়া যায়, তখন অভীক্ষাটিকে নির্ভরযোগ্য বলা যেতে পারে। কোন অভীক্ষা যা পরিমাপ করা হবে তা কতটা সঙ্গতিপূর্ণভাবে করে তার মাত্রাকে অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা বলে। কোন অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয়ের চারটি পদ্ধতি আছে, তা হল- a) পুনঃপরীক্ষা পদ্ধতি (Test-Retest Method), b) সমান্তরাল অভীক্ষা পদ্ধতি (Parallel Test Method), c) খন্ডিতার্ধ পদ্ধতি (Split-half Method), d) অন্তপর্দীয় সঙ্গতিমূলক পদ্ধতি (Inter Item Consistency Method)।

 

3. অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা :- একটি অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে আমরা বুঝি, ঐ অভীক্ষাটি ব্যক্তিগত প্রভাবের দ্বারা কতটা প্রভাবিত। যদি কোন অভীক্ষার পরিমাপের মাত্রা বিভিন্ন পরীক্ষক কর্তৃক একই সম্ভাব্য স্কোর প্রদান করে তবে অভীক্ষাটির নৈর্ব্যক্তিকতা আছে বলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে অভীক্ষাটি যত ব্যক্তিগত প্রভাব মুক্ত হবে, ততই তার নৈর্ব্যক্তিকতা বেশি হবে। সাধারণভাবে একটি অভীক্ষা যদি পরীক্ষকের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়, অর্থাৎ কোন অভীক্ষাপত্র যেকোনো পরীক্ষকের দ্বারাই মূল্যায়ন করা হোক না কেন তার মান যদি পরিবর্তিত না হয়, অর্থাৎ একই থাকে তখনই তাকে অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বলা যেতে পারে, যা সু-অভীক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

 

4. অভীক্ষার প্রয়োগশীলতা :- যেকোনো অভীক্ষা প্রণয়ন করার পর তার প্রয়োগ করার যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রয়োগশীলতা বলতে আমরা বুঝি অভীক্ষা প্রয়োগের সরলতা, জটিলতা, সুবিধা, অসুবিধা থাকবে না অর্থাৎ, সু-অভীক্ষার প্রয়োগ কৌশল নিশ্চয়ই সহজ হবে। যদি কোন নির্দেশনা থাকে তা হবে সহজ, স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত হয় তবেই অভীক্ষাটির প্রয়োগশীলতা আছে বলে ধরা যেতে পারে।

 

5. পরিমিততা :- পরিমিততা হল একটি অভীক্ষার ব্যবহারিক গুণ। অভীক্ষা প্রস্তুত করলে প্রয়োগে এবং মন্তব্য ইত্যাদিতে সময়, অর্থ এবং পরিশ্রমের দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে। সীমিত সময়ে, সীমিত খরচে, স্বল্প পরিশ্রমে যদি অভীক্ষাটির সকল কাজ সম্পন্ন করা যায় তবে তার পরিমিততা আছে বলে ধরা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অর্থ, পরিশ্রম এবং সময় সংক্ষেপের জন্য অভীক্ষার গুণগত বৈশিষ্ট্যকে কখনই বিসর্জন দেওয়া চলবে না।   

 

6. উপযোগিতা :- উপযোগিতা বলতে অভীক্ষার বাস্তব প্রয়োগশীলতাকে বোঝায়। কোন অভীক্ষার উৎকর্ষতা বিচারে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত যে, এই অভীক্ষাটি কোন বাস্তব প্রয়োজন মেটাতে পারছে কিনা।

 

7. নম্বরদানের উপায় :- একটি সু-অভীক্ষার নম্বরদানের পদ্ধতি খুব সহজ, সরল ও দ্রুত হওয়া উচিত। একটি অভীক্ষার স্কোরিং কি (Scoring Key) অবশ্যই থাকবে যাতে নম্বর বণ্টন দ্রুত ও সহজে করা যেতে পারে। এবং মাথায় রাখতে হবে অভীক্ষাটি যেন কোনরকম ব্যক্তিগত প্রভাব পরিলক্ষিত না হয়। বর্তমানে বেশ কিছু পরীক্ষায় কম্পিউটারের মাধ্যমে নম্বরদান করা হয়ে থাকে।

 

8. অভীক্ষার আদর্শায়ন :-  পরিমাপের তাৎপর্য নির্ণয় সম্পর্কিত ত্রুটি দূর করার প্রক্রিয়াকেই অভীক্ষার আদর্শায়ন বলে।অভীক্ষার একটি বিশেষ গুন হল তার মানদণ্ড। কারণ কোন মানদণ্ড সাফলাঙ্ক্যকে ছাড়া তুলনা করা সম্ভব নয়। মূলত একটি প্রাসঙ্গিক মান ধরে নিয়ে তার সাথে সাফলাঙ্ক্যের তুলনা করা হয়ে থাকে। এবং এই প্রাসঙ্গিক মানকেই নর্ম (Norm) বলা হয়।যে কোন আদর্শায়িত অভীক্ষার নর্ম থাকা প্রয়োজন। কোন অভীক্ষার আদর্শমান বা নর্ম চার প্রকারের হয়ে থাকে। যথা- a) শতাংশ নর্ম, b) আদর্শস্কোরের নর্ম, c) শ্রেণীগত নর্ম, d) বয়স ভিত্তিক নর্ম



 

 

 

 

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি-
  1. ইসলাম, ড. নূরুল। শিক্ষায় মূল্যায়ন ও পরিমাপ। শ্রীধর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা : ৮২ – ৮৪
  2. পাল, ড. গোবিন্দ পদ., মিত্র, ড. গঙ্গারাম। শিক্ষায় মূল্যায়ন। নব প্রকাশনী। পৃষ্ঠা : ২৯ – ৩২

 ____________________________