Kd's e-pathsala Technology in Education শিক্ষণ মডেলের ধারণা, বৈশিষ্ট্য এবং উপাদান

শিক্ষণ মডেলের ধারণা, বৈশিষ্ট্য এবং উপাদান



শিখন ও শিক্ষণ পারস্পরিক ক্রিয়ার সামগ্রিক ফল। শিক্ষণের এমন কোন তত্ত্ব গঠন করা সম্ভব নয়, যার দ্বারা সকল শিক্ষকের সকল রকম আচরণ ব্যাখ্যা করা যায়। এই কারণে শিক্ষণের তত্ত্বের বিকল্প হিসাবে শিক্ষামূলক কারিগরি বিদ্যায় শিক্ষণের মডেল গঠনের চেষ্টা করা হয়। শিক্ষণ ক্ষেত্রে শিক্ষণ মডেলের বিকাশ এক নতুন উদ্ভাবন।

 

শিক্ষণ কী? 

শিক্ষণদান বা Teaching শব্দটিকে বিভিন্ন ব্যাক্তি বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। Little Oxford Dictionary -তে বলা হয়েছে, “Teaching is impart knowledge or skill, give instruction or lesson, instill inspire with”. Gage উল্লেখ করেছেন যে, শিক্ষণদান, একটি অস্বচ্ছ শব্দ। Gage (1963) এর মতে, শিক্ষণদানের অর্থ ব্যাক্তিদের মধ্যেকার যে কোন প্রভাব যার লক্ষ্য যখন হয় অন্য ব্যাক্তিরা, যেভাবে আচরণ করতে পারে বা করার সেই পন্থার পরিবর্তন ঘটান। Gage-এর মতে উত্তম শিক্ষণের তত্ত্ব নির্ভর তিনটি বিষয়ের উপর। এগুলি হল-

  1. শিক্ষকগণ কেমন করে আচরণ করেন।
  2. কেন তারা আচরণ করেন।
  3. তাদের আচরণের প্রভাব।

 

মডেল কী?

মডেল শব্দটি আমরা কোন গঠনমূলক কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। মডেল বলতে বোঝায় প্রাপ্ত তথ্যগুলি গুছিয়ে সাজিয়ে মধ্যেকার সম্পর্ক দেখা।

  

শিক্ষণ মডেলের ধারণা

শিক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সৃজনাত্মক কার্যাবলীর একটি আদর্শ রুপকল্প হল Teaching Model বা শিক্ষণ মডেল। শিক্ষণ মডেল বলতে বোঝায় এমন একটি পরিকল্পনা বা সংগঠন যেটি ব্যবহার হয় পাঠ্যক্রমের রুপদান। নির্দেশনামূলক – উপকরণ সাজাতে এবং শ্রেণীকক্ষের ও অন্যান্য পরিস্থিতিতে নির্দেশদান মূলক সহায়তাদানে শিক্ষণ মডেলের অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন মনোবিদ এবং শিক্ষাবিদ ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, এগুলি হল নিম্নরুপ-

Allen and Ryan-এর মতে, ‘মডেলিং হল ব্যাক্তির বিশেষভাবে প্রদর্শন যা শিক্ষার্থীরা অনুকরণের মাধ্যমে শেখে’।

Dececco-এর মতে, ‘শিক্ষণ মডেল হল শিক্ষণের একটি তত্ত্ব প্রয়োগের সর্বোত্তম বিকল্প পদ্ধতি। তার মতে, এই মডেল গুলি দ্বারা বোঝা যায় কেমন করে বিভিন্ন শিক্ষণ ও শিখনমূলক পরিস্থিতি সম্পর্কযুক্ত।

Joyce and Weil-এর মতে, ‘শিক্ষণ মডেল হল একটি শিক্ষণ পরিকল্পনা যা কোন পাঠ্যক্রম বা পাঠ্যসূচিকে নির্দিষ্টভাবে সক্রিয় হতে ব্যবহার করা হয় এবং শিক্ষকের কার্যকলাপকে পরিচালনা করে’।

Jangira and Singh বলেছেন, নির্দেশনামূলক কাজে শিক্ষণমূলক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত উপাদানগুলির মধ্যে যে নক্সা বা পরিকল্পনা করা হয় তাকে বলে শিক্ষণ মডেল।

 

শিক্ষণ মডেলের ধারণা সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা আয়ত্ত্ব করতে হলে, এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা দরকার। যা নিম্নে উল্লেখ করা হল-

  1. আদর্শ শিক্ষণ মডেলের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য বিন্যাস থাকবে।
  2. একটি আদর্শ শিক্ষণ মডেলে শিখন পরিবেশের বিবরণ থাকা বাঞ্ছনীয়। এর দ্বারা প্রত্যাশিত আচরণ কি ধরণের পরিবেশগত উদ্দীপনার মধ্যে আসবে তা জানা সম্ভব হবে।
  3. আদর্শ শিক্ষণ মডেল বৈজ্ঞানিক ও মনোবৈজ্ঞানিক প্রণালীতে প্রস্তুত করা হবে।
  4. শিক্ষণের ফলাফল সম্পর্কে পরিষ্কার দ্বৈততাহীন বক্তব্য আদর্শ শিক্ষণ মডেলের মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয়।
  5. একটি শিক্ষণ মডেলে শিক্ষার্থীর সম্পাদিত কাজের বিচারবিধি মান সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা থাকবে।
  6. আদর্শ মডেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দক্ষতা সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা লাভ করা যায়।
  7. শিক্ষণের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনতে চাই। সুতরাং শিক্ষণ মডেল এমনভাবে তৈরি করা হবে যেখানে এই আচরণগত উদ্দেশ্যগুলির উল্লেখ থাকবে।
  8. আদর্শ শিক্ষণ মডেল শিক্ষকের মান উপযুক্ত পরিমাপে সহায়তা করবে।
 

উপরিউক্ত সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে, শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন আচরণ, নতুন পরিবেশ এবং উপযুক্ত গঠনমূলক কাজের বাস্তববায়নযোগ্য প্রতিরুপকে শিক্ষণ মডেল বলে।

 

শিক্ষণ মডেলের উদ্দেশ্য

  1. শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহ করা।
  2. শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার উন্নতি ঘটানো।
  3. শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ব্যাক্তিগত গুণাবলী সরবরাহ করা।
  4. শিক্ষার্থীদের আচরণধারাকে উন্নত করে।

 

 

শিক্ষণ মডেলের উপাদান

শিক্ষণ মডেলের ছয়টি উপাদান রয়েছে। যথা-

  1. কেন্দ্রবিন্দু (Focus)
  2. বিন্যাস (Syntax)
  3. প্রতিক্রিয়ার নীতি (Principles of Reaction)
  4. সামাজিক পরিবেশ (Social System)
  5. সহযোগী তন্ত্র (Support System)
  6. প্রয়োগের ক্ষেত্র (Application Context)

 

  1. কেন্দ্রবিন্দু (Focus)- শিক্ষণ মডেলের মূলভিত্তি বা কেন্দ্রবিন্দু, কিসের জন্য এই মডেলটি তৈরি করা হয়েছে।
  2. বিন্যাস (Syntax)- শিক্ষণ মডেলটি কার্যকরী করার জন্য শিক্ষক কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
  3. প্রতিক্রিয়ার নীতি (Principles of Reaction)- এক্ষেত্রে শিক্ষক কি নীতি অনুসরণ করে, প্রতিক্রিয়া করবেন, তার বিবরণ।
  4. সামাজিক পরিবেশ (Social System)- এই স্তরে শিক্ষক শিক্ষার্থীর পারস্পরিক ভূমিকা অর্থাৎ কে, কি কাজ করবেন তা এই অংশে বর্ণিত থাকে।
  5. সহযোগী তন্ত্র (Support System)- এই অংশে শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রদীপনের ব্যবহারে, শিক্ষণ মডেলকে কার্যকরী করে তোলে।
  6. প্রয়োগের ক্ষেত্র (Application Context)- এখানে শিক্ষক বিভিন্ন রকম মডেলের মধ্যে থেকে বাছাই করে থাকেন, যে কোনটা বেশী কার্যকারী হবে।

শিক্ষণ মডেলের শ্রেণীকরণ

শিক্ষণ মডেলের শ্রেণীকরণ নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানো হল- 

 

 

 

 

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি-

  • চেল, মদনমোহন., নাগ, শর্মিলা। প্রাসঙ্গিক শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান। প্রগ্রেসিভ পাবলিসার্স, পৃষ্ঠা: ১৪২-১৫০
  • ইসলাম, ড. নূরুল। শিক্ষা- প্রযুক্তিবিদ্যার রূপরেখা। শ্রীধর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা: ১৭৯-১৯৫
  • সেন, . মলয় কুমার। শিক্ষা প্রযুক্তিবিজ্ঞান। সোমা বুক এজেন্সী, পৃষ্ঠা: ২০৮-২৬৯

____________________________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *