অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বাধা অথবা প্রতিবন্ধকতাগুলি হল নিম্নরূপ :
- মনোভাবজনিত বাধা : অন্তর্ভুক্তিকরণের পথে প্রধান অন্তরায় হল মনোভাবজনিত বাধা। সমাজের তথাকথিত সাধারণ মানুষদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব অন্তর্ভুক্তিকরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, এই মনোভাবের জন্যই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতার অভাব দেখা যায়। সার্থক অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য এই মনোভাবের পরিবর্তন সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
- দৈহিক বাধা : অন্তর্ভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে দৈহিক বাধাও গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়গৃহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক স্থানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অধিগম্যতায় অসুবিধা দেখা যায়। বিদ্যালয়ে হুইলচেয়ার, র্যাম্প ইত্যাদির অভাবের জন্য শিশু বিদ্যালয়ের সমস্ত স্থানে যাতায়াত করতে পারে না। এছাড়াও বিশেষ শিশুদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তির অভাবও অন্তর্ভুক্তিকরণের অন্যতম প্রতিবন্ধক।
- অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক : সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিশেষ শিশুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব যদি যথাযথ না হয় তাহলে অন্তর্ভুক্তিকরণের বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি হবে। শুধুমাত্র মনোভাবই নয়, শিক্ষক যদি এই সমস্ত শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষিত না হন সেক্ষেত্রেও সফল অন্তর্ভুক্তিকরণ ঘটবে না।
- সহপাঠীদের সাথে সম্পর্ক : সাধারণ বিদ্যালয়ে অন্যান্য স্বাভাবিক সহপাঠীদের গ্রহণীয়তা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব রাখে। অনেক সময়ই দেখা যায়, যে বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধকতাহীন শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিক্ষার্থীরা হেনস্থা হয়। সেক্ষেত্রে বিশেষ শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনকি বিভিন্ন মানসিক সমস্যারও শিকার হয়।
- সামাজিক বর্জন ও বৈষম্য : আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধকতাহীন ব্যক্তির মূল্য একজন প্রতবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি বলেই ধরা হয়। এখনও সমাজের বেশিরভাগ অংশের মানুষই মনে করেন প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের পড়াশোনার ফলাফল শূন্য। কিছু আদিম বিশ্বাস, রীতি নীতির সাথে চরম অবহেলা এই সমস্ত শিশুদের সামাজিকভাবে পৃথক করে রেখেছে। এই সামাজিক বৈষম্য অন্তর্ভুক্তির অন্যতম প্রতিবন্ধক।
- অর্থনৈতিক অবস্থা : সমস্ত প্রকার শিক্ষার্থীকে একই ছাদের তলায় শিক্ষাদানের জন্য অর্থনৈতিক অবস্থার দিকটিও যথেষ্ট বিবেচ্য। কারণ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের জন্য তাদের উপযোগী উপকরণের প্রয়োজন হয়। বিদ্যালয় অনেক সময়ই তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় অর্থনৈতিক কারণে।
___________________________