Kd's e-pathsala Introduction to Education শিক্ষার লক্ষ্য : ব্যক্তিতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, বৃত্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্য

শিক্ষার লক্ষ্য : ব্যক্তিতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, বৃত্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্য



শিক্ষার লক্ষ্য (Aims of Education)
নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া কোনো প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খলভাবে এবং সুনির্দিষ্ট উপায়ে পরিণতি দিকে এগিয়ে যায় না। মানবজীবন নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া দিগ্ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সঠিক নির্দেশনা ছাড়াও ব্যক্তি তার বাঞ্ছিত পথের দিকে এগোতে সক্ষম হয় না। “Aimless life is like rudderless ship” অর্থাৎ লক্ষ্যহীন জীবন নোঙরহীন নৌকার ন্যায়। তাই শিক্ষার যথার্থ লক্ষ্য থাকা একান্ত প্রয়োজন।কিন্তু, মানবজীবন সর্বদা গতিময় কোন সময় একস্থানে থেমে থাকে না। তাই শিক্ষার লক্ষ্যকেও গতিময় সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, নতুবা শিক্ষার লক্ষ্যও তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। সেহেতু শিক্ষার লক্ষ্যের প্রবলরূপে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল-


 
১) কর্মসম্পাদনের প্রেষণা প্রদান করে।
২) যেকোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য, সঠিক দিশা বা নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।
৩) শিক্ষা প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য নির্ধারণে সহায়তা করে।
৪) শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
৫) সুশৃঙ্খলভাবে এবং সুনির্দিষ্ট উপায়ে কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।
কিন্তু সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তনশীলতা পরিলক্ষিত হয়। আবার শিক্ষার লক্ষ্যের অভিব্যক্তিও দেখা যায়। অর্থাৎ বিভিন্ন দেশে শিক্ষার লক্ষ্য পরিবর্তিত হতে হতে আধুনিক শিক্ষার বহুমুখী লক্ষ্যের উদ্ভব হতে দেখা যায়। শিক্ষার কয়েকটি লক্ষ্য এবং তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে করা হল।
            ১। ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য (Individual Aim)
            ২। সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য (Social Aim)
            ৩। বৃত্তিমূলক লক্ষ্য (Vocational Aim)
            ৪। গণতান্ত্রিক লক্ষ্য (Democratic Aim)


 
 
ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য (Individual Aim)
একজন ব্যক্তির নিজস্বতা অর্থাৎ তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো-মন্দ, চাহিদা, সামর্থ্য ইত্যাদির নির্ভর করে শিক্ষার যে প্রকার লক্ষ্য গড়ে উঠেছে তাই হল শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য। ব্যক্তিতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য হল ব্যক্তির স্বকীয়তাকে সংরক্ষণ করা এবং তার নৈতিক, বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করে। প্রত্যেক শিশু তার নিজস্ব স্বতন্ত্র সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়, শিক্ষাই এই সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায়। এই মতবাদে বিশ্বাসীদের কাছে ব্যক্তির চাহিদাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ফ্রয়েবেল, পেস্তালজি, মন্তেসরি, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ শিক্ষাবিদ শিক্ষার এই প্রকার লক্ষ্যকে সমর্থন করেছেন।

 

 
সমাজতান্ত্রিক  লক্ষ্য (Social Aim)
শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ছাড়া আরও একটি লক্ষ্য আছে যা হল সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য, যা শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষা হল একটি সামাজিক দায়িত্ব। এর উদ্দেশ্য হবে সমাজ কল্যাণের পথে নিজেকে নিয়োজিত করা, শিক্ষা এমন হবে যার দ্বারা সমাজ পুষ্ট হবে। সমাজ বাইরে ব্যক্তির পৃথক কোন অস্তিত্ব নেই। এই মতবাদে বিশ্বাসীরা মনে করেন, আগে সমাজ তারপরে ব্যক্তি। শিক্ষার এই প্রকার লক্ষ্যে ব্যক্তির তুলনায় সমাজের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। হবস, হেগেল, হার্বাট, ডিউই প্রমুখ শিক্ষাবিদ শিক্ষার এই প্রকার লক্ষ্যকে সমর্থন করেছেন।

 
 
বৃত্তিমূলক  লক্ষ্য  (Vocational Aim)
শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য বলতে বোঝায়, ব্যক্তিকে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং তাকে ভবিষ্যৎ জীবনে বৃত্তি ও জীবিকা অর্জনের জন্য দিক্ নির্দেশ করা। একজন মানুষকে সুখ, সমৃদ্ধি এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে অর্থের প্রয়োজন এবং অর্থ আসে উপার্জনের মধ্যে দিয়ে, সেহেতু শিক্ষার এই প্রকার লক্ষ্যে শিশুকে অপরের উপরে নির্ভরশীল না হয়ে নিজ দক্ষতায় অর্থ উপার্জন এবং সঠিক বৃত্তি বেছে নেওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।
 
 
গণতান্ত্রিক  লক্ষ্য  (Democratic Aim)
শিক্ষার একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল গণতান্ত্রিক লক্ষ্য। গণতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে বােঝায়, দেশের নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সমতা বজায় রাখার ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটানাে, সুষ্ঠু নাগরিক প্রস্তুত করা এবং সুনাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত সুষ্ঠু দেশ গঠন করার জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য সমূহকে। এই ধরণের প্রধান আলোচ্য বিষয়ই হল শিশুদের গণতান্ত্রিক আদর্শে উদবুধ করা।
 

 

 
শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের ত্রুটি
 
ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের ত্রুটি
 
১. শিক্ষা যদি সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তির উপর গুরুত্ব দেয় তবে শিক্ষার সমাজকল্যাণকর দিকটি সম্পূর্ণরূপে অবহেলিত হয়।

২. এই প্রকার শিক্ষার লক্ষ্য শিশুকে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর করে তোলে।

৩. শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিকে যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে তার মধ্যে নানান দুর্নীতির জন্ম নেবে। 

৪. বর্তমান শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গিন বিকাশ, যা শিশুর সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ছাড়া আসম্ভব।



 
সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের ত্রুটি

১. সামজিক চাহিদা, রুচি, সামর্থ্য, সম্পর্ক, মূল্যবোধকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলস্বরুপ শিশুর নিজস্ব আগ্রহ ও চাহিদা সম্পূর্ণরূপে অবহেলিত হয়।

২. শিক্ষার এই প্রকার লক্ষ্যে শিশুর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় না।

৩. সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে শিশুর নৈতিক মূল্যবোধ গঠনের কোনো স্থান নেই।

৪. এই প্রকার লক্ষ্যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে একই ছাঁচে ঢালার চেষ্টা করা হয়, ফলস্বরুপ শিশুর স্বকীয়তা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
 


 গ্রন্থপঞ্জি-
  • বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্চনা। শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষানীতি। বি. বি. কুন্ডু গ্র্যান্ড সন্স, কলকাতা।
  • পাল, ড. অভিজিৎ কুমার। শিক্ষাদর্শনের রূপরেখা। ক্লাসিক বুকস, কলকাতা।
  • ইসলাম, ড. নূরুল। শিক্ষাতত্ত্বের রূপরেখা। শ্রীধর প্রকাশনী, কলকাতা।
 
____________________________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *