Kd's e-pathsala Curriculum Studies পাঠক্রমের ধারণা এবং গতানুগতিক ও আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্য

পাঠক্রমের ধারণা এবং গতানুগতিক ও আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্য



[ez-toc]
সমাজ জীবন সতত পরিবর্তনশীল এই পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে ব্যক্তিকে সর্বদা অভিযোজন করে চলতে হয়। ব্যক্তির অভিযোজনের পথে তার অন্যতম বন্ধু হল পাঠক্রম। পাঠক্রম ব্যক্তিকে তার বাঞ্ছিত পথে এগিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে থাকে। আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞান সর্বদা শিক্ষার্থীর সামনে নতুন কিছু উন্মোচনে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন, এই উন্মোচনের অন্যতম হাতিয়ার হল পাঠক্রম। শিক্ষার চারটি প্রক্রিয়া (শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠক্রম ও শিক্ষালয়)-র অন্যতম উপাদান হল পাঠক্রম। যেকোনো শিক্ষাপ্রক্রিয়া এই উপাদানটি ছাড়া অসম্পন্ন, তাই শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে তোলার ক্ষেত্রে এই উপাদানটির সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রক্রিয়া গতি ও সার্থকতা অনেকাংশে শিক্ষাপ্রক্রিয়ার সচলতার উপর নির্ভর করে, শিক্ষাপ্রক্রিয়ার এই সুষ্ঠু গতিপ্রবাহকে আরও মসৃণ রূপ দেয় পাঠক্রম। 
 


 পাঠক্রমের ধারণা
পাঠক্রম হল একপ্রকার যাত্রাপথ, সেই পথ অনুসরণে শিক্ষার্থী তার গন্তব্যস্থলে পৌছায়। অন্যভাবে বলতে গেলে, নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য অভিজ্ঞতাপুঞ্জই হল পাঠক্রম। পাঠক্রমের ধারণা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে, পাঠক্রমের দুই প্রকার ধারণা পরিলক্ষিত হয়। যথা- 
 
 
 গতানুগতিক ধারণা :
পাঠক্রমের বুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণে পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণার সন্ধান পাওয়া যায়। পাঠক্রমের ইংরেজী প্রতিশব্দ ‘Curriculum’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “Currere” থেকে যার আক্ষরিক অর্থ হল- ‘Course to be run for reaching a certain goal’, অর্থাৎ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য দৌড়ের পথ। এদিক থেকে বিচার করলে পাঠক্রম বলতে, বিদ্যালয়ে অনুসৃত পাঠ্যসূচি-কেই বোঝানো হয়। গতানুগতিক অর্থে পাঠক্রম এবং পাঠ্যসূচির মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। গতানুগতিক সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা আয়ত্ত করতে হলে গতানুগতিক পাঠক্রমের কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা দরকার। গতানুগতিক অর্থে পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য হল– 
    ১. বিদ্যালয়ে অনুসৃত পাঠ্যসূচিই হল পাঠক্রম।
    ২. পাঠক্রম হল কিছু বিষয়ের সমন্বয়।
    ৩. শিখন উদ্দেশ্যকে সফল করার একরকম পন্থা।
    ৪. পাঠক্রম হল বিষয়বস্তু।
    ৫. বিদ্যালয় কর্মীবর্গ দ্বারা নির্ধারিত বিষয়সূচি।
 
গতানুগতিক অর্থে পাঠক্রমের ধারণার আরও সুস্পষ্ট রূপ আয়ত্ত করতে হলে, বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের দেওয়া সংজ্ঞা আলোচনা করা দরকার, যা নিম্নে উল্লেখ করা হল-

Good (1959), “A general overall plan of the content or specific materials of instruction that the school should offer the student by way of qualifying him for graduation or certification or for entrance into a professional or vocational field”.

Foshay (1969), “All the experiences a learner has under the guidance of the school”.

 উপরি আলোচিত বৈশিষ্ট্য ও সংজ্ঞা সমূহ পর্যবেক্ষণ করে আমরা বলতে পারি যে, গতানুগতিক অর্থে পাঠক্রম হল কিছু পাঠ্যবিষয় বা সূচির সমন্বয় যা শিক্ষার্থী তার নির্দিষ্ট অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য বিভিন্ন শিক্ষাক্ষেত্র থেকে অর্জন করে থাকে। 

 
 
 আধুনিক ধারণা :
পাঠক্রমের আধুনিক ধারণা বিস্তৃত ও ব্যাপক। ১৯৩৫ সালে ক্যাসওয়েল ও ক্যাম্পবেল পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণার অবসান ঘটিয়ে তাদের আধুনিক পাঠক্রমের সংজ্ঞাটি দেন। 

Caswell and Campbell (1935), “Curriculum is composed of all the experiences children have under the guidance of the teacher”.

পাঠক্রমের আধুনিক ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রম হল একপ্রকার গতিশীল প্রক্রিয়া, যাকে সতত পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে সর্বদা পরিবর্তিত হতে হয়। এই পরিবর্তনের প্রভাব সবথেকে বেশি পরিলক্ষিত হয় শিক্ষাপ্রক্রিয়ায়, এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে শিক্ষার্থীকেও এই পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের চিন্তাশক্তি ও বিচার-করণ ক্ষমতার মধ্যে পরিবর্তন আনয়ণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে আধুনিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গিন বিকাশে সাহায্য করে। আধুনিক অর্থে পাঠক্রম হল বুহুমুখী অভিজ্ঞতার সমন্বয় যার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের সাথে অভিযোজনে সক্ষম হয়, কিন্তু আধুনিক পাঠক্রমের আরও সুস্পষ্ট ধারণা গ্রহণ করতে হলে, আধুনিক পাঠক্রমের কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা প্রয়োজন। আধুনিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলি হল

    ১. পাঠক্রম হবে প্রকৃত জীবনধর্মী ও অভিজ্ঞতা সমূহের সমষ্টি। পাঠক্রমের দ্বারা শুধুমাত্র বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটবে না। আধুনিক পাঠক্রমের দ্বারা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক হবে। 
    ২. পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা, সামর্থ্য ও বিকাশগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী।
    ৩. পাঠক্রমের বিষয়বস্তু এমনভাবে গঠিত হবে যা শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করবে।
    ৪. আধুনিক পাঠক্রম হল তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিকের সমন্বয়।
    ৫. আধুনিক পাঠক্রম শিক্ষার নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণ এবং জীবনপযোগী সমস্ত বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত।
 
আধুনিক অর্থে পাঠক্রমের ধারণার আরও সুস্পষ্ট রূপ আয়ত্ত করতে হলে, বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের দেওয়া সংজ্ঞা আলোচনা করা দরকার, যা নিম্নে উল্লেখ করা হল-
 

Kerr (1968), “All learning which is planned or guided by the school, whether it is carried out in a group or individually inside or outside of the school”.

Tyler (1956), “All of the learning of students which is planned by and directed by the school to attain its educational goals”.

Crow and Crow, “Curriculum includes all the learners experiences in or outside school that are emotionally, socially, spiritually and morally”.

 

Marsh and Stafford-এর মতে, পাঠক্রম হল পরিকল্পনা এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়, যা শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে নির্দেশনায় সম্পন্ন করে থাকেন। এই সংজ্ঞাটিকে নিম্নে একটি চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল-
চিত্র : পাঠক্রমের ধারণা
 
উপরি আলোচিত বৈশিষ্ট্য ও সংজ্ঞা সমূহ পর্যবেক্ষণ করে আমরা বলতে পারি যে, আধুনিক পাঠক্রম হল পূর্ব-পরিকল্পনা, শিখন অভিজ্ঞতা এবং জীবন উপযোগী জ্ঞানের এক প্রকার সমন্বয়িত রূপ, যা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এবং বাইরে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়ে থাকে। 
 
 
 গতানুগতিক এবং আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্য :
গতানুগতিক এবং আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল- 
 
___________________________________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *