Kd's e-pathsala Great Educator ভগিনী নিবেদিতার শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাচিন্তা

ভগিনী নিবেদিতার শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাচিন্তা



সিস্টার নিবেদিতা (মিস মার্গারেট ই. নোবেল) বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজন বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন মহিলা ছিলেন। নিবেদিতা, একজন আইরিশ যিনি ১৮৯৮ সালের জানুয়ারিতে ভারতে এসেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতা রামকৃষ্ণদেবের আদেশে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার সঞ্চার ও তাদের সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতিকরণকে নিজ জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর কাছে, দেশবাসীকে শিক্ষিত করা ছিল সবচেয়ে পবিত্র কর্তব্য, এবং শিক্ষার লক্ষ্য ছিল একজন ব্যক্তির সামাজিক চেতনাকে প্রসারিত করা এবং তাকে জীবনের সঠিক দিকনির্দেশ দেওয়া, এবং এটা তখনই সম্ভব যখন একজন ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষার অনুপ্রবেশ ঘটবে। মার্গারেট ই. নোবেল ‘নিবেদিতা’ হলেন এক ভাবনার স্রোত, সে ভাবনা হল শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনা।

 

সংক্ষিপ্ত জীবনী

মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল ২৮শে অক্টোবর ১৮৬৭ তারিখে আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি টাইরোনের দুঙ্গানন শহরে (Dungannon in County Tyrone, Ireland) মেরি ইসাবেল (Mary Isabel) এবং স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেলের (Samuel Richmond Noble) কাছে জন্মগ্রহণ করেন; তার নামকরণ করা হয়েছিল তার ঠাকুমার নামে। মার্গারেট ছিল তার বাবার প্রিয় সন্তান। যখন স্যামুয়েল নোবেল বিভিন্ন গরিব মানুষের সাহায্যে নানান কাজ করতেন কিংবা নানান স্থান পরিদর্শনে যেতেন, তখন মার্গারেট তাঁর বাবার সঙ্গী হতেন। মার্গারেটের বয়স যখন মাত্র দশ বছর তখন তাঁর বাবা (১৮৭৭) মারা যান। মার্গারেট হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তাঁর পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন, যা কংগ্রিগ্যানালিস্ট চার্চের (Congregationalist Church) সদস্য দ্বারা পরিচালিত হত। এই কলেজের প্রধান শিক্ষিকা তাকে ‘আত্মত্যাগ’-এর শিক্ষা দেন। মার্গারেট পদার্থবিদ্যা, শিল্পকলা, সঙ্গীত এবং সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়গুলি অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি সুইস শিক্ষাসংস্কারক জোহান হেনরিখ পেস্তালজির এবং জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ ফ্রয়েবেলের সংস্পর্শে আসেন এবং তাদের শিক্ষাচিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হন। ১৮৯৫ সালের নভেম্বরে, তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সাথে প্রথমবার দেখা করেন। স্বামী বিবেকানন্দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, মার্গারেট ভারতে আসেন। ২৮শে জানুয়ারী ১৮৯৮-এ তিনি কলকাতায় পৌঁছান। স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাচিন্তা তাঁকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। বাংলার এক অতি অন্ধকার যুগে অম্লান জ্যোতিষরূপে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন আজীবন শিক্ষাব্রতধারিণী মহীয়সী এই নারী। তিনি ১৩ই অক্টোবর ১৯১১ সালে (৪৩ বছর বয়সে) দার্জিলিং, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারতে মারা যান।
 

জীবনদর্শন

নিবেদিতা ১৮৮০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে একজন শিক্ষিকা এবং পরে একজন পরীক্ষামূলক শিক্ষাবিদ হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। যখন তিনি উইম্বলডনে নিজের স্কুল পরিচালনা করছিলেন তখন তিনি রাস্কিনের শিষ্য এবং সেই সময়ের একজন প্রভাবশালী লিথোগ্রাফার (lithographer) এবং শিক্ষাবিদ এবেনেজার কুকের (Ebenezer Cooke) সংস্পর্শে আসেন, তিনিই তাকে সেসামে ক্লাব (Sesame Club) নামে পরিচিত লন্ডনের বুদ্ধিজীবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে অন্যান্যদের মধ্যে লেডি রিপন, লেডি মার্গেসন এবং রোনাল্ড ম্যাকনিল ছিলেন প্রধান সদস্য হিসেবে এবং যেখানে টমাস হাক্সলি এবং জর্জ বার্নার্ড শ-এর মতো ব্যক্তিরা সদস্য ছিলেন। এখানেই তিনি নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন এবং সাথে নানান বিষয়ে গভীর অধ্যয়নের সুযোগ পান। এবং এখান থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান মার্গারেটের পরবর্তী জীবনের বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে মূল মন্ত্র হয়ে ওঠে যে, “that a human being moves from ‘the familiar to the unfamiliar’, and ‘concrete to the abstract’, and informs not just her ideas on education but learning and development in any sphere, including religion and spirituality”.

 

১৮৯৮ সালের জানুয়ারিতে নিবেদিতার ভারতে আবির্ভাবের পর, অবিলম্বে কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ শুরু করেননি। তিনি তাঁর গুরু স্বামী বিবেকানন্দের পথপ্রদর্শনে সংগ্রহ করলেন এক নতুন জগতের ঠিকানা-যা তাঁর কাছে ছিল সম্পূর্ণ অজানা। তিনি ভারতীয় মেয়েদের শিক্ষার জন্য নতুন এক শিক্ষার পরিকল্পনা রচনা করেন। এই পরিকল্পনাই তাঁকে তাঁর বাঞ্ছিত লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করেছিল। তাঁর শিক্ষাভাবনার এই পথে স্বামীজিও তাঁর সাথে ছিলেন। এক্ষেত্রে স্বামীজি নিবেদিতাকে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার পূর্ণ চিত্র এবং কোন শিক্ষাপদ্ধতি ভারতীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছিলেন। এইভাবে, তাকে প্রথমে ভারতের চেতনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল। আর তার জন্য বিবেকানন্দের চেয়ে ভালো গুরু আর কে হতে পারে। ভারতীয় দর্শন, ইতিহাস, মহাকাব্য, শাস্ত্র অধিগত করলেন নিবেদিতা, রচনা করলেন নানা গ্রন্থ। তারই নির্যাসে তৈরি করলেন তাঁর জীবনদর্শন যা মূলত ভারতীয় ভাবনায় সমৃদ্ধ। 

শিক্ষাদর্শন

স্বামীজির মতোই, নিবেদিতাও শিশুর অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার উৎকর্ষতায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর মতে প্রকৃত শক্তির উৎস হল হৃদয়, তার আগে এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিক সরঞ্জাম একটি নিছক সুপারফিশিয়ালিটি। নিবেদিতার দৃষ্টিতে শিক্ষা প্রথম এবং সর্বাগ্রে একজন ব্যক্তির অনুভূতি এবং পছন্দের প্রশিক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। “Unless we train the feelings and the choice, our man is not educated. He is only decked out in certain intellectual tricks that he has learnt to perform. By these tricks he can earn his bread. He cannot appeal to the heart, or give life”। অর্থাৎ- আমরা অনুভূতি এবং পছন্দকে প্রশিক্ষণ না দিলে একজন শিশুকে শিক্ষিত করা যাবে না। এক্ষেত্রে সে কিছু কার্য সম্পাদনের মধ্যেদিয়ে, শুধুমাত্র কিছু বৌদ্ধিক কৌশল আয়ত্ত করে থাকে। এসব কৌশলে শিখে সে তার অন্নের জোগাড় করতে পারে। কিন্তু, সে নিজেকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত বলে দাবি জানাতে পারে না। 

 

নিবেদিতা বিশ্বাস করতেন যে, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে অনুভূতির প্রশিক্ষণ ছাড়া আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নেই। “To feel nobly, and to choose loftily and honestly, is a thousand-fold more important to the development of faculty than any other single aspect of the educational process”। তাঁর শিক্ষা মানুষকে একটি নৈতিক সত্তা হিসাবে উদ্বিগ্ন করে এবং এটি প্রাথমিকভাবে একটি নৈতিক কাজ। তার কাছে আদর্শ শিক্ষা হৃদয়কে প্রভু হিসেবে, বুদ্ধিকে তার অনুগত ও সুরেলা সেবক হিসেবে স্থাপন করেছেন। তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন জাতীয় ঐক্য নির্ভর করে যুক্তিনিষ্ঠ, বুদ্ধি নির্ভর দ্রুত কর্মক্ষমতার ওপর। সেইজন্যই প্রয়োজন সার্বজনীন শিক্ষার। শিক্ষা বিষয়ে তাঁর বিভিন্ন নিবন্ধে বারবার তিনি জাতীয়তার উপর জোড় দিয়েছেন।  

 

 

শিক্ষার লক্ষ্য

নিবেদিতার মতে, “একটি জাতীয়শিক্ষার প্রথম এবং সর্বাগ্রে আসে, জাতীয় আদর্শবাদের শিক্ষা”। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল সহানুভূতি ও শিশুর বৌদ্ধিক দিকের বিকাশ। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় আদর্শকে শিশুর নিকট উপস্থাপন করে, তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের ধারণা গড়ে তোলা এবং তাদের নিজ অতীত সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটানো। “Our own imagination must be first based on our own heroic literature. Our hope must be woven out of our own history. From the known to the unknown must be the motto of every teacher, rule of every lesson”। ভারতে একটি সত্যিকারের জাতীয় শিক্ষা মানুষকে ‘জন-দেশ-ধর্ম’-এর প্রতি ত্যাগের জীবনের প্রতি জাগ্রত করবে। 

বিদ্যালয় এবং পাঠ্যক্রম সম্পর্কে ধারণা

নিবেদিতা একটি ছোট্ট ভাড়ার কুটিরে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাঁর সামনে সবথেকে বড় যে সমস্যাটি ছিল সেটি হল, অভিভাবকদের কুসংস্কার কাটিয়ে, তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে রাজি করানো। এক্ষেত্রে অনেক অভিভাবক তাঁকে দেখে হতবাক হয়েছিলেন এবং অনেকেই প্রকাশ্যে তার প্রতি ঠাট্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি নির্ভীক ছিলেন, এবং তার প্রচেষ্টায় অটল থেকে, তিনি বিভিন্ন বয়সের কয়েকটি মেয়েকে জড়ো করতে সফল হন। তিনি তাদের পড়া, লেখা, সেলাই, পেইন্টিং, অঙ্কন, স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি এবং কাদামাটি মডেলিং শিখিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তার ভালবাসা, আন্তরিকতা এবং সংকল্প জনগণের প্রতিরোধ ভেঙে দেয়। একসময় সাধারণ মানুষ তাঁর জন্য তাদের মনের ও ঘরের দুয়ার খুলে দেয় এবং তিনি তাদের অন্তরে প্রবেশ করে ও ধীরে ধীরে তাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠেন। 

 

শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা

তিনি তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষাপ্রণালীর সংমিশ্রনে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর শিক্ষাদান প্রক্রিয়া অবশ্যই ছিল শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, কর্মের মধ্যদিয়ে সে শিক্ষার অরম্ভ। নিবেদিতা তাঁর বিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাধারার মত ধ্যানধারণা, মানসিক সংযম ও শৃঙ্খলার উপর জোড় দিতেন। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছিলেন জোহান হেনরিখ পেস্তালজির এবং জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ ফ্রয়েবেলের শিক্ষাপদ্ধতি। পেস্তালজি এবং ফ্রয়েবেল যেমন তাঁর শিক্ষাপরিকল্পনায় বস্তুভিত্তিক পাঠদানের কথা বলেন, ঠিক তেমনি নিবেদিতে তাঁর বিদ্যালয়ে বস্তুভিত্তিক পাঠদান পদ্ধতি (Object lesson method) প্রচলন করেন। বস্তুনির্ভর পাঠদানে শিশুমন যুক্ত হবে প্রকৃতির সঙ্গে, যে প্রকৃতি জীবনের উৎস। নিবেদিতা লিখেছেন: বস্তুনির্ভর পাঠে শিশু বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শিখবে কেমন করে তার চিন্তাস্রোত মূল কেন্দ্রে ফিরে যাবে নানা ঘটনা-পরম্পরার দ্বারা পরীক্ষিত ও সংশোধিত হয়ে। তাই সহানুভূতি, সত্য-নিষ্ঠা, নিপুণতা- এই বিশেষ গুণগুলি এই বস্তুনির্ভর পাঠের দ্বারাই গড়ে ওঠে।

নারীশিক্ষা

ভারতে সাধারণ মহিলাদের জীবন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিবেদিতা দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, শিক্ষিত হওয়া থেকে দূরে থাকা রক্ষণশীল হিন্দু মহিলা এমন একটি শিক্ষার প্রাপক ছিলেন যা তার নিজস্ব উপায়ে অত্যন্ত বিশেষায়িত ছিল যদিও এর ধরণটি এমন ছিল যে এর মূল্য সহজে পাওয়া যায় না। মূল্যায়ন তিনি বিশেষ করে ‘ব্রত’ (‘ব্রত’) ভারতীয় অনুশীলনের প্রশংসা করেছিলেন, যেগুলিকে পবিত্র বলে গণ্য করা হয়েছিল, যার মধ্যে ভারতীয় মহিলারা শৈশব থেকেই লালিত-পালিত হয়েছিল। যদিও তিনি পরিবারিক কাঠামোর মধ্যে বিশেষ করে নারীদের অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে তারা সামাজিক এবং জাতীয়ভাবে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে একটি বৃহত্তর ভারতীয় জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে। তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাদের বর্তমান শিক্ষা (যা পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে ছিল) মূলত একটি উন্নয়নের পরিবর্তে শৃঙ্খলার শিক্ষা ছিল এবং আধুনিক যুগে ভারতের মহিলাদের আরও বেশি সামাজিক সম্ভাবনার জন্য গড়ে তোলা উচিত যা তাদের অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ করে তুলবে। তাদের ও অধিকার রয়েছে বৃহত্তর সম্প্রদায়ের কোন কাজে কিংবা দেশের জন্য বৈচিত্র্যময় ভূমিকা গ্রহণ করা। তাঁর মতে তিনি একজন আদর্শ মহিলা যিনি পরিস্থির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বৈচিত্র্যময় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। “Efficiency to all the circumstances of life, this womanhood before wifehood, and humanity before womanhood, is something which the education of the girl must aim for, in every age”। নিবেদিতা তাঁর বিদ্যালয়ের কাজে পেয়েছিলেন ক্রিস্টিনকে, সুধীরাদেবীকে, যাঁদের অক্লান্ত আত্মনিবেদনে পরবর্তী পর্যায়ে বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ নারিশিক্ষালয়ে রুপান্তরিত হয়েছিল।  

 

শৃঙ্খলা সম্পর্কে ধারণা

সিস্টার নিবেদিতা তাঁর শিক্ষাচিন্তায় ভারতবাসীর মনে ‘জাতীয় চেতনার’ ভিত্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর মতে, যেকোনো কার্যকর শিক্ষার জন্য জাতীয় আত্ম-চেতনা, শক্তি ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করা দরকার। তাঁর মতে- true obedience is one of the noblest expressions of freedom. Disobedience is mere chaos”. নিবেদিতা মনে করতেন আনুগত্য শৃঙ্খলার প্রথম সিঁড়ি। 

উপসংহার 

ভগিনী নিবেদিতা ছিলেন বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর ব্যক্তিত্ব, আধ্যাত্মিকতা চিন্তাভাবনা, মনের শক্তি, পবিত্রতা এবং তপস্যা ভারতবাসীর হৃদয়ে ও মননে আজও গেঁথে রয়েছে। তার কাজ এবং নিবন্ধগুলির উত্তরাধিকার যা তিনি রেখে গেছেন, তা সত্যের সাধনা এবং তার উচ্চ আহ্বানের একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয় যার জন্য তিনি তার জন্মভূমি ছেড়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সেবা ও করুণার রূপকার এবং ভক্তি ও ত্যাগের প্রতীক। 

 

বিভিন্ন পুস্তকে ও প্রতিষ্ঠানে তাঁর নামের ব্যবহার আমাদের এটাই জানান দেয়, যে তিনি সমগ্র ভারতবাসী ও হিন্দুধর্মের প্রতি কি করে গেছেন। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে, পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নামকরণ করা হয়েছে সিস্টার নিবেদিতার নামে। সারা দেশে বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজের নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। তার স্মরণে রাস্তা, সেতু ও পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতে তার অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার একটি পোস্টাল স্ট্যাম্পও জারি করেছিল। ১৯৬৭ সালে ভারত জুড়ে তার জন্মশতবর্ষ ব্যাপকভাবে পালিত হয়।

 

 

 
 
 
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
  • বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্চনা। শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষানীতি। বি. বি. কুণ্ডু গ্র্যান্ড সন্স, পৃষ্ঠা: ৪৬৮-৪৭৯
  
__________________________