Kd's e-pathsala Educational Sociology ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিক্ষার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক

ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিক্ষার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক



ধর্ম, সংস্কৃতি এবং শিক্ষার মধ্যে সর্বদাই একটি নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। নন্দনতত্ত্ব এবং নীতিশাস্ত্রের সাথে একত্রে ধর্ম ও সংস্কৃতি গঠিত হয়ে থাকে। দুটি ব্যক্তির একই সংস্কৃতি থাকতে পারে, কিন্তু ধর্মীয় অনুশীলনের ক্ষেত্রে তাদের ভিন্নতা থাকে। সংস্কৃতি মানব আচরণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এবং এটি সামাজিক ঐতিহ্য উপর নির্ভর করে। অপরদিকে, ধর্ম ইশ্বর বা সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টার সাথে জড়িত। সংস্কৃতি মানুষের বিবর্তন, তাদের বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত। ধর্ম এবং সংস্কৃতির বিষয়টি মানুষের সৃষ্টির সবচেয়ে বড় সম্পদ হিসাবে দেখা যেতে পারে কারণ, তারা সৃষ্টির পর থেকেই মানুষের সাথে জড়িত রয়েছে। এটি প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে- মানুষ, সংস্কৃতি এবং ধর্ম একে অপরের পরিপূরক।

 

সংস্কৃতি বা কৃষ্টির অর্থ হলো শিক্ষা বা চর্চা দ্বারা লব্ধ বিদ্যাবুদ্ধি, শিল্পকলা, রুচি, নীতি, প্রভৃতির উৎকর্ষ। অন্যদিকে ধর্ম হল বিশেষ একটি পদ্ধতি,যা কতগুলি পবিত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে কার্যকলাপের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে এবং যা মানুষ ও ঊর্ধ্বশক্তির মধ্যে সম্পর্ক রচনা করে।

According to Tylor, “Culture can be defined as the complex whole includes knowledge, belief, art, law, morals, customs and any capabilities and habits acquired by man as a member of the society”.

According to Cavanagh, “Religion can also be defined as the varied symbolic expression of an appropriate response to that which people deliberately affirm as being of unrestricted value for them”.

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে শিক্ষা কেবলমাত্র জীবিকা অর্জনের পন্থা মাত্র নয়, এমনকি চিন্তা ও ভাবের সূতিকাগৃহ বা নাগরিকত্ব অর্জনের প্রতিষ্ঠানও নয়। এ হল জীবনের প্রবর্তনা, সত্যানুসন্ধান ও ধর্মাচরণে দীক্ষালাভ”। 

 

ধর্ম হ’ল বিশ্বাস, সংস্কৃতি হল চর্চা যা বিশ্ব দর্শনের একটি সংগঠিত সংগ্রহ যা মানবিকতা আধ্যাত্মিকতার সাথে এবং কখনও কখনও নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কিত। অনেক ধর্মে বর্ণনামূলক, প্রতীক, ঐতিহ্য এবং পবিত্র ইতিহাস রয়েছে যা জীবনের অর্থ বা বিশ্বজগতের উৎস ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। মহাজাগতিক ও মানব প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের ধারণাগুলি থেকে তারা নৈতিকতা, ধর্মীয় আইন বা পছন্দসই জীবনধারা অর্জনের প্রবণতা অর্জন করে। কিছু অনুমান অনুসারে, বিশ্বে প্রায় 4,200 ধর্ম রয়েছে। সংস্কৃতি একটি জীবন প্রবাহে চলে আসা একটি চর্চা। “সংস্কৃতি” শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল “Culture”-এর বুৎপত্তিগত অর্থ ল্যাটিন শব্দ “Colere”- যার অর্থ হল ‘কর্ষণ করা’। এছাড়া শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যাক্তির আচরণে পরিবর্তন আনে এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে অভিযোজনে সহায়তা করে।

 

উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক নানাভাবে বিদ্যমান। কিন্তু এই তিনটিকে একত্রিত ভাবে বিচার করলে দেখা যায় সংস্কৃতি ও ধর্মের সম্পর্ক অতি নিবিড়। কারণ ধর্ম ও সংস্কৃতি অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিন্যাস, যা মূল্যবোধের জন্ম দেয়। শিক্ষা সর্বদাই এই দু’য়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে এবং এই দু’য়ের যে একটি স্বতন্ত্র ও বিকাশমূলক রুপ রয়েছে তা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রসঙ্গকে সরাসরি এবং সচেতনভাবে বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কিন্তু সেই সঙ্গে সংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রকেও অস্বীকার করা যায় না, কারণ তা বাস্তব সত্য। এই কারণে শিক্ষাবিদগণ বহুকৃষ্টিমূলক (Multicultural) শিক্ষার কথা বলে থাকেন। অনেক গবেষকই বহুকৃষ্টিমূলক সমাজের নানান শিক্ষাপদ্ধতি নির্দেশ করেছেন। এইসব পদ্ধতির প্রধান নীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে যে সম্পর্ক আছে  তাঁকে নিষ্কৃয় ভাবে না দেখে, সক্রিয়ভাবে পঠন পাঠনের মাধ্যমে দৃঢ়তর করা উচিত। ধর্মকে বিভাজনের বিষয় হিসেবে গণ্য না করে সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।

বিংশ শতাব্দীতে, “সংস্কৃতি” নৃতত্ত্ববিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় ধারণা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে, মানবিক ঘটনার পরিসরকে জিনগত উত্তরাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না, বিশেষত আমেরিকান নৃতত্ত্ববিদ্যায় “সংস্কৃতি” শব্দটির দুটি অর্থ ছিল:

  1. প্রতীক সহ অভিজ্ঞতাকে শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং প্রতিনিধিত্ব করার এবং কল্পিত ও সৃজনশীলভাবে কাজ করার জন্য বিকশিত মানব ক্ষমতা।
  2. বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী স্বতন্ত্র উপায়ে তাদের অভিজ্ঞতাগুলি শ্রেণিবদ্ধ ও প্রতিনিধিত্ব করে এবং সৃজনশীল আচরণ করে।

ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নীচে সংক্ষেপে বলা যেতে পারে-

  1. ধর্ম ও সংস্কৃতি মানবজাতির মতোই প্রাচীন।
  2. দুটির ভিত্তি একই, যেখানে প্রাচীন এবং আধুনিক উভয় রীতিনীতি এবং সমাজের মূল্যবোধের মূল হিসাবে গন্য হত।
  3. সংস্কৃতি ধর্মকে জন্ম দেয়, আবার কোনও জায়গার ধর্ম সামাজিক বিন্যাসকে জন্ম দেয়।
  4. সামাজিক মূল্যবোধ, নিয়ম, লোকাচার, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং কারও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত রীতিনীতিগুলি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
  5. ধর্ম ও সংস্কৃতি দুই উন্নত চেতনা যা একজন ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক চেতনাবোধ ও মূল্যবোধের জন্ম দেয়।

উপরের বক্তব্যগুলি থেকে, অনুমান করা যেতে পারে ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে কেবল আমাদের পরিবার বা সমাজ নয় আমাদের মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। এবং শিক্ষা এক্ষেত্রে আমাদের সেই সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করে এবং ব্যাক্তির মধ্যে সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রকৃত অর্থ অনুধাবনে সহায়তা করে থাকে।

 ___________________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *